পূর্ব বর্ধমানের তেজগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত বিদ্যাসুন্দর কালীবাড়ি।বর্ধমানের রাজারা এই মন্দিরে মাঝে মাঝে পুজো দিতে আসতেন।শোনা যায়,রাজা তেজচাঁদের আমলে দামোদরের তীরবর্তী তেজগঞ্জ ছিল ঘন জঙ্গলে ঘেরা। সে সময় ডাকাতের অত্যাচারে কেউ যাতায়াত করতে পারত না এই এলাকা দিয়ে।
অতীতে মন্দিরের পূজারী ছিলেন ‘সুন্দর’। এই মন্দিরে রাজকন্যা ‘বিদ্যা’-র হাতে গাঁথা মালা প্রতিদিন নিয়ে যেতেন মালিনী মাসি।একদিন সেই মালা দেখে পূজারী মালিনী মাসির কাছে জানতে চান, এমন সুন্দর মালা কে গেঁথেছেন। মালিনী মাসির কাছে তিনি জানতে পারেন ওই মালা গেঁথেছেন রাজকন্যা ‘বিদ্যা’। তিনি মালিনী মাসিকে তাঁর সঙ্গে রাজকুমারী ‘ বিদ্যা’-র দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু মালিনি মাসি জানান তা সম্ভব নয়, রাজা তার অনুমতি দেবেন না। মালিনী মাসি রাজবাড়ীতে ফিরে গিয়ে পূজারি সুন্দরের কথা জানান বিদ্যাকে। বিদ্যাও সুন্দরের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
advertisement
কথিত আছে, বিদ্যাকে দেখার জন্য পূজারী এই মন্দির থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করেছিলেন। সেই সুরঙ্গ পথ দিয়েই ‘বিদ্যা’-র সঙ্গে দেখা করতে যেতেন ‘সুন্দর’। গোপনে শুরু হয় তাঁদের প্রেম । কিন্তু, এই প্রেম কাহিনি বেশিদিন গোপন থাকেনি। প্রেমের কথা রাজার কানে পৌঁছয়। ‘বিদ্যা’ ও ‘সুন্দর’-কে এই মন্দিরে ‘নরবলি’ দেওয়ার নির্দেশ দেন রাজা। রাজার নির্দেশ মতো তাঁদের বলি দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয় মন্দিরে কিন্তু বলি দেওয়ার সময় তাঁদের রক্ষা করেন মা কালী। বলির ঠিক আগের মুহূর্তে ‘বিদ্যা’ ও ‘সুন্দর’ মা কালীকে স্মরণ করার জন্য সময় চেয়ে অনুরোধ করেন।শোনা যায় তারপরই জ্ঞান হারান কাপালিক। আর সেই সময়েই ‘বিদ্যা’ ও ‘সুন্দর’ নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তারপর থেকেই তাদের আর কোন খোঁজ মেলেনি।
আরও পড়ুন : দেবীর কাছে প্রার্থনা করলেই পূর্ণ হয় চাকরির স্বপ্ন? দীপাবলিতে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে ‘সার্ভিস কালী’-র মন্দিরে
নরবলি বন্ধের পর ছাগবলির প্রথার চালু থাকলেও এ বছর থেকে ছাগ বলির পরিবর্তে ছাঁচি কুমড়ো বলি দেওয়া হবে বলে জানান বর্তমান এক সেবায়েত। তবে নিয়ম মেনে মায়ের নিত্যভোগে দেওয়া হয় মাছ। এছাড়াও প্রতিদিন হয় চিঁড়ে ভোগ। এমনকি ‘বিদ্যা’ ও ‘সুন্দর’ -এর অনন্য প্রেম কাহিনিকে স্মরণীয় করে রাখতেই ‘দক্ষিন মশানী’ মন্দির থেকে এই মন্দিরের নাম হয় ‘বিদ্যাসুন্দর’ কালীবাড়ি।