গত সোমবার রাতে পুরুলিয়ার টামনা থানা এলাকায় একটি মাটির বাড়ি ভেঙে দেওয়াল চাপা পড়ে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়৷ আহত হন আরও তিন জন৷ ওই শবর পরিবারটিরই পোষ্য একটি পথ কুকুর ছিল৷ বাড়িতে না থাকলেও সারাদিন ওই বাড়ির আশেপাশেই ঘোরাফেরা করত সে৷ দু বেলা ওই সারমেয়টিকে খেতেও দিত ওই শবর পরিবারটি৷ পরিবারের সদস্য মানিক শবরের সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় সারাদিন কাটাত সে৷
advertisement
সোমবার রাতে পুরুলিয়ার টামনা থানার ভাণ্ডারপুর গ্রামের কাছে একটি কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়ে৷ গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে বাড়িটি ভেঙে পড়ে৷ আহতদের উদ্ধার করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে তিন জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা৷ পুলিশ জানিয়েছে, মানিক শবরের স্ত্রী বিনতি শবর ছাড়াও বাড়িতে বেড়াতে আসা আরও দু জনের মৃত্যু হয়েছে৷ মানকি শবর, তাঁর বাবা দলুই শবর এবং সাত বছরের মে জবা পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷
শবর পরিবারটির মাটির ওই বাড়ি খেড়বন নামে যে জায়গায় ছিল, তার দেড় থেকে দু কিলোমিটারের মধ্যে অন্য কোনও বাড়ি ঘর নেই৷ মঙ্গলবার ভোরে কাছাকাছি একটি গ্রামের এক বাসিন্দা জঙ্গলে মাশরুম সংগ্রহ করতে গিয়ে একটি কুকুরকে অস্বাভাবিক আওয়াজ করে ডাকতে শোনেন৷ তখনই তিনি এগিয়ে গিয়ে দেখেন মাটির ওই বাড়িটি ভেঙে পড়ে আছে৷ ভেঙে পড়া মাটির দেওয়াল এবং টালির চালার নীচ থেকে মানুষের গোঙানির শব্দও তাঁর কানে এসে৷ এর পর স্থানীয় ওই বাসিন্দাই গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দাদের এই দুর্ঘটনার খবর দেন৷ ঘটনাস্থলে এসে আহতদের উদ্ধার করে পুলিশ৷ যে কুকুরটি প্রথম এই বিপদের কথা জানান দিয়েছিল, সেটি এই সারমেয়টিই ছিল৷
সোমবার রাতের ওই দুর্ঘটনায় শবর পরিবারের ওই মাটির বাড়ি কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে৷ ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে পড়ে রয়েছে তাঁদের কিছু জিনিসপত্র৷ কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকেই ওই জায়গাতেই ঠায় বসে আছে মানিক শবরের পোষ্য সেই সারমেয়টি৷ নয়তো ওই বাড়ির আশপাশেই ঘোরাফেরা করছে সে৷ যেন মানিক শবর এবং তাঁর পরিবারের জিনিসপত্রের পাহারাদার বসে রয়েছে তাঁদের প্রিয় পোষ্যটি৷ তার যেন বিশ্বাস, মানিক এবং তাঁর পরিবারের বাকি সদস্যরা ঠিক ফিরে আসবেন৷ গ্রামে ঘুরে বেড়ানো একটি পথকুকুরের এই প্রভুভক্তি দেখে অবাক ওই অঞ্চলের অন্যান্য বাসিন্দারাও৷ অনেকেই তাকে দেখতেও আসছেন৷