জনশ্রুতি আছে, সাধক ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী পুরির মন্দিরে গিয়েছিলেন জগন্নাথ দর্শনে।সেখানে তাকে অপমান করে বের করে দেওয়া হয়। মনের দুঃখে তিনি হুগলির মাহেশে ফিরে আসেন। গঙ্গার পাড়ে তার কুটির ছিল। স্বপ্নাদেশ পান গঙ্গায় ভেসে আসা কাঠ দিয়ে জগন্নাথের মূর্তি তৈরি করে পুজো করতে। ছয় শতকের বেশি সময় ধরে মাহেশে পুজিত হয়ে আসছেন জগন্নাথ, যেখানে পরে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। খিচুড়ি, অন্ন, পায়েস তিন নিয়ে মাহেশ। মাহেশ জগন্নাথ মাহেশ মন্দিরে ৫৬ ভোগ দেওয়া হয় জগন্নাথকে।
advertisement
এইবছর মাহেশের রথ যাত্রার ৬২৯ বছর। মার্টিন বার্ন কোম্পানীর তৈরি লোহার রথের বয়স ১৩৮ বছর। আগে ছিল কাঠের রথ। বর্তমানে এই রথের দেখভাল করেন কলকাতা শ্যামবাজারের বসু পরিবার। নয় চূড়া বিশিষ্ট এই রথ ৫০ ফুট উচ্চতার। লোহার ১২টি চাকা রয়েছে। ম্যানিলা রোপ দিয়ে টানা হয় রথ। সকাল থেকে চলে পুজো পাঠ, ভক্তরা ভিড় জমিয়েছেন জগন্নাথ মন্দিরে। এরপর বিকাল চারটের সময় রথের রশিতে টান পড়ে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
হুগলির দেওয়ান ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র বসু, তিনি বর্তমান লোহার রথটি তৈরি করে দিয়েছিলেন। তারও আগে পাঁচটি কাঠের রথ ছিল। জানা যায়, প্রথম রথ তৈরি করে দিয়েছিলেন বৈদ্যবাটির এক মোদক। তিনি কাঠের রথ তৈরি করে দিয়েছিলেন। তারপর আরও চারটি রথ বসু পরিবার থেকে তৈরি করা হয়েছিল। পরে সেই রথ কোন কারণে আগুনে ভষ্মিভূত হয়ে যায়। তাই নতুন করে আবার রথ তৈরি করা হয়।
পরবর্তীকালে কৃষ্ণচন্দ্র বসু এই লোহার রথ তৈরি করে দিয়েছিলেন। আগে কাঠের রথ চাতরায় যেত। সেখানে কাশিশ্বর মন্দির পর্যন্ত রথ যেত। কাশিশ্বর পন্ডিত যখন দেহ রাখেন তখন সেই রথ চলে আসে বল্লভপুর মন্দিরের। সেখানে দু’বছর মাসির বাড়ি হয়েছিল। পরবর্তীকালে জগন্নাথ মন্দিরের সেবাইতদের সঙ্গে বল্লভপুর মন্দিরের সেবাইতদের মনোমালিন্যের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে বেরুই থেকে মদনমোহন নিয়ে এসে হোগলার ঘর করে বর্তমান যে মাসির বাড়ি বা কুঞ্জ বাটি সেখানেই মাসির বাড়ি করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে মতিলাল মল্লিকের স্ত্রী রঙ্গমনি দাসী তিনি বর্তমান মাসির বাড়ি তৈরি করে দেন। তখন থেকেই জগন্নাথ দেবকে রথে করে সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয়। রথে রয়েছে ন’টি চূড়া। ১৩৮ বছর পূর্বের যে রথ সেই রাথেই জগন্নাথ দেব আরোহন করে। একদম উপরে থাকেন জগন্নাথ সেখানে তাকে স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিত করা হয় । তিনি রাজা সেজে যান মাসির বাড়ি। তৃতীয় তলায় রামলীলার চিত্র দিয়ে ঢাকা থাকে। দ্বিতীয় তলায় কৃষ্ণলীলা চিত্র ও সবশেষে প্রথম তলায় চৈতন্য লীলার চিত্র দিয়ে ঢাকা থেকে। রথ টানার জন্য ২০০ গজের ম্যানিলা রোপ থাকে তা দিয়েই রথের রশি ধরে টানা হয়। ১২টি লোহার বড় বড় চাকা রয়েছে। রথের গায়ে ৯৬ জোড়া চোখ আঁকা রয়েছে। ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির একটা সারথি ও রাজহংস আছে। বিউবল বাজলেই কসর ঘন্টা বাজে। তখনই রথের রশিতে টান পড়ে এবং কাইফায়ারিং হয়। এভাবেই রথ কে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় মাসির বাড়ি। এই রাথে কোন ব্রেক থাকে না। তাই বড় ৫০ ফুটের কাঠের বিম ব্যবহার করা হয় বেক হিসেবে।
রাহী হালদার