প্রথমে সিউড়ির একটি টায়ারের দোকানে কাজ করতেন, কিন্তু তাঁর চলার পথ যে অতটা সহজ হবে না, প্রথম থেকেই জানতেন তিনি। তবে হাল ছেড়ে দেননি। টায়ারের দোকানে কাজ করার সময় বেশ কিছুটা দক্ষতাও অর্জন করেন তিনি। কিন্তু এগিয়ে চলার স্বপ্ন তাঁর পিছু ছাড়েনি। কয়েক বছরের মধ্যেই সিউড়ির পুরাতন ডাঙালপাড়ায় একটি নিজে ছোট্ট টায়ারের দোকান তৈরী করলেন।
advertisement
পুঁথিগত বিদ্যা, সঙ্গে খুব ভালো দক্ষ কর্মীও ছিলেন তিনি। টায়ারের দোকানের পাশাপাশি তিনি তাঁর দক্ষতায় শুরু করলেন রিসোলিং টায়ারের কাজ। অর্থাৎ, ক্ষয় হয়ে যাওয়া গাড়ির চাকার রাবার গলিয়ে তাতে অন্যান্য সামগ্রী মিশিয়ে তা নতুন করে ব্যবহারের যোগ্য করে তোলা। কম খরচে, চাকা না পাল্টেই।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ভয়ংকর কাণ্ড! মাঝ সমুদ্রে তখন মাছ ধরছিলেন ৪ জন, যা ঘটল...
রিসোলিং টায়ার কী? সেই আমলে গাড়ির মালিকদের বুঝিয়ে ছিলেন এই ব্যবসায়ীই। ব্যবসার প্রথমে শুরুতে একটু সমস্যা হলেও ধীরেধীরে ব্যবসা বেশ ভালোই চলতে থাকে। এই কাশেম প্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন তখনকার সেই ছোট্ট সিউড়ি শহরে। উন্নতি হতে থাকে তাঁর ব্যবসার। সিউড়ির বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজেও তিনি যুক্ত হয়ে পড়েন। প্রথমে সেই সিউড়ির ডাঙ্গালপাড়ায় একটি ছোট্ট রুমের তাঁর ব্যবসা বড় হতে শুরু করল তাঁর কর্মদক্ষতায়। তারপর যখন ব্যবসা বড় হতে থাকে তখন তাঁর মেশিনপত্র বাড়তে থাকায় রিসোলিং টায়ারের ফ্যাক্টরিই বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি, ব্যাবসার জায়গা পরিবর্তন করে তিনি নিয়ে যান সিউড়ির রবীন্দ্রপল্লীতে । সেই থেকে ব্যবসা আরও ভালো চলতে থাকে।
আরও পড়ুন: তৃণমূলে 'মন কি বাত' শুনতে পাচ্ছেন দিলীপ ঘোষ! হঠাৎ কী ঘটল?
তিনি বিহারের মোজাফ্ফরপুর থেকে এসে সিউড়িতে যে ব্যবসা শুরু করেন, তাতে তাঁকে একজন সফল ব্যবসায়ী বলে চেনেন সবাই। তিনিও নিজেকে বীরভূমের মানুষ হিসাবেই ভাবতেন। তিনি শুধু সফল কিংবা প্রভাবশালী ব্যবসায়ীই নন, তিনি একজন সুন্দর ও উদার মনের মানুষও ছিলেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি বিয়ে করেন সিউড়িতেই। বর্তমানে তাঁর তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। বর্তমানে তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ পেশায় প্রতিষ্ঠিত। শেষের দিকে ওই ব্যবসায়ী অসুস্থ হয়ে পড়লেও মানসিক ভাবে শক্ত থেকেই বাড়ি থেকেই ব্যবসায় খোঁজ খবর রাখতেন। ২ বার হজ করে এসেছেন। তাঁকে অনেকে হাজি সাহেব বলেও সম্মান করতেন। ২০২২-এর ১৫ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। তবে তাঁর এই মৃত্যুতে শোকাহত ব্যবসায়ী মহল থেকে সকলেই । প্রত্যেকের কাছে চিরকাল একজন নজির হয়ে থেকে যাবেন তিনি । সিউড়ির অত্যন্ত কাছের ও মাটির মানুষ হয়ে এতদিন ছিলেন তিনি। নিজেকে বীরভূমেরই সন্তান ভাবতেন তিনি , যে কোন মানুষ বিপদে পড়লে সাহায্যের হাত বাড়াতে কোন সংশয় ছিল না এই মানুষটির।