দুর্গাপুরের দুই সীমা বাউড়ি, একজন ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী, আরেক জন সাদামাঠা বয়স্ক এক গৃহবধূ। দুই জনেই দুর্গাপুর থানার অধীন গোপালমাঠে থাকেন। ভিড়িঙ্গি তারকনাথ স্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সীমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিব্বি ঢুকছে লক্ষী ভাণ্ডারের টাকা আর বয়স্ক গৃহবধূ সীমা বাউরির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে সরকারী স্টুডেন্ট স্কলারশিপের টাকা।
দুই সীমা বাউরির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে গোপালমাঠের একটি রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখাতে। আর গোলমালের শুরুটা ঠিক এইখান থেকে। একই নামে দুটো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কিন্তু বছর খানেক ধরে দুই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঘটে চলেছে এক ভুতুড়ে কাণ্ড। বাবা মা দিন মজুর, দুর্গাপুরের গোপালমাঠ সংলগ্ন গ্যামন কলোনীর সীমা বাউড়ি মানুষ হচ্ছে দাদা বৌদির কাছে, দাদা সামান্য ঠিকা কর্মী আর বৌদি কয়লা ডিপোতে কাজ করে। তাই দুর্গাপুর ভিড়িঙ্গির তারকনাথ হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সীমা বাউড়ি ঘরের কাজ সামালানোর পাশাপাশি পড়াশোনা করছে, অভাব গোটা পরিবারের নিত্য সঙ্গী। তাই সরকারের কাছে সীমা আবেদন করেছিল, যদি স্কলারশিপের সুযোগ মেলে। এক অভাবী পরিবারের ছাত্রীর এমন আর্জি পেয়ে সরকারী স্কলারশিপও মঞ্জুর হয় সীমার। বছরে ৩৬০০ টাকার মতো ঢুকতেও শুরু করে সীমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। দুটি ধাপে এই টাকা ঢোকে। এবার ব্যাঙ্ক পাসবুক আপডেট করাতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সীমা বাউরির। মাসে মাসে তার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে পাঁচশো টাকা লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রকল্পের টাকা।
advertisement
তাহলে স্টুডেন্ট স্কলারশিপের টাকা কোথায় গেল? রাস্তায়ত্ত ওই ব্যাঙ্কের সৌজন্যে সেই টাকা ঢুকেছে গৃহবধূ সীমা বাউরির অ্যাকাউন্টে। অর্থাৎ একাদশ শ্রেণীর ছাত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিব্বি ঢুকছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা আর গৃহবধূ সীমা বাউরির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে স্টুডেন্ট স্কলারশিপের টাকা। এমন এক ভুতুড়ে কাণ্ডে এখন বেজায় বিপদে ভিড়িঙ্গি তারকনাথ হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সীমা বাউরি। স্টুডেন্ট স্কলারশিপ এর টাকা না পেয়ে নষ্ট হচ্ছে পড়াশোনা, বন্ধ করে দিতে হয়েছে গৃহশিক্ষককে, অর্থাৎ স্রেফ টাকার অভাবে অভাবি পরিবারের মেয়েটির পড়াশোনা বন্ধ হতে বসেছে।
আরও পড়ুন: আসানসোলে প্রথম বার 'দিদি'র সঙ্গে একমঞ্চে, মনের কথা বলেই দিলেন বাবুল সুপ্রিয়!
আর এদিকে গৃহবধূ সীমা বাউড়ি স্টুডেন্ট স্কুলের স্কলারশিপের টাকা পেয়ে বেশ খুশী। ধাপে ধাপে প্রায় বেশ কয়েক হাজার টাকা তুলে নিয়ে সংসারে কাজেও লাগিয়ে দিয়েছেন। গৃহবধূ সীমা বাউরির অভিযোগ, এতগুলো টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকতে দেখে তার সন্দেহ হয়, ব্যাঙ্কের গোপালমাঠ শাখায় গিয়ে তিনি এই হঠাৎ ঢুকে পড়া এই টাকার কথা বলেন, কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাকে বলেন সরকার যখন ব্যাঙ্ক মারফত টাকা দিচ্ছে তখন তা ভোগ করতে অসুবিধেটা কোথায়, টাকা তুলে নিয়ে প্রয়োজন মেটানোর নিদান দেয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। আর খুশী মনে তাই সরকারের দেওয়া এই টাকা তিনি খরচ করেছেন মন খুলে।
আরও পড়ুন: বাবুল সুপ্রিয় কেন তৃণমূলে? সেই আসানসোলে দাঁড়িয়েই রহস্য ভাঙলেন মমতা
অন্যদিকে ছাত্রী সীমা বাউড়ি ও তার দাদার অভিযোগ, যতবার আমরা ব্যাংকে বলি কোথাও একটা সমস্যা পেকেছে, ততবার ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাদেরকে অপমান করে বলে জোচ্চুরি করে একই নামে দুটো অ্যাকাউন্ট খুলেছে তারা। সেটাও চালাকি করে যাতে করে সরকারী দুটি প্রকল্পের সুযোগ পায় তারা। একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সীমা বাউরির দাদা অনেক খুঁজে খুঁজে গৃহবধূ সীমা বাউরির ঠিকানা জোগাড় করে পৌঁছেছে তাঁর কাছে, কিন্তু ব্যাঙ্ক এবার বলছে পুলিশের সাহায্য নিন। এখন এমন এক ভুতূড়ে কাণ্ডে বেজায় বিড়ম্বনায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তাদের সাফাই একই নাম হওয়াতে বেধেছে বিপত্তি, খুব তাড়াতাড়ি মিটিয়ে দেওয়া হবে সমস্যা, আপাতত দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
--অর্পণ চক্রবর্তী