এই ভ্রাতৃত্বের অনন্য নজির আজ ঘুরছে প্রত্যন্ত পাথরপ্রতিমার ঘরে-ঘরে। বছর সাতান্নর আশরাফ আলি থাকেন পাথরপ্রতিমার এল প্লটের উপেন্দ্রনগরে। চাষবাস করেই দিন কাটে তাঁর। পাঁচ ছেলের বাবা আশরাফ। ছেলেরা সকলেই প্রতিষ্ঠিত। গ্রামের স্কুলে কোনক্রমে বছর দু'য়েক গিয়েছিলেন। অক্ষরজ্ঞানটাও ঠিকঠাক হয়নি। তবে খুব সাদাসিধে ও উদার মনের আশরাফ। বছর দশেক আগে জমি সংক্রান্ত একটি কাজে ব্লকের সদর রামগঙ্গা যান আশরাফ। তখনই আলাপ হয় কানাইলালের সঙ্গে। কানাইলাল রামগঙ্গাতে থাকেন। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও বছর আটেকের ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। হাই স্কুলের গণ্ডি পার হননি তিনি। পঞ্চায়েতের ঠিকাদারি করেন। দুজনের আলাপের পর থেকেই সম্পর্ক পারিবারিক স্তরে পৌঁছয়। নদী পেরিয়ে ব্লক সদরে কাজে এলে কানাইলালের বাড়িতে যেতেন আশরাফ। কানাইলালের মা রাজলক্ষ্মীকে আশরাফ মা বলে ডাকতে শুরু করেন। ধর্মের বেড়াজাল মুছে গিয়ে সম্পর্কের বাঁধন তৈরি হয়।
advertisement
আরও পড়ুন: আপনার কি যৌন মিলনে আগ্রহ কমছে? বন্ধ্যাত্ব নয় তো? জানুন
গত চার বছর আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন কানাইলাল। চিকিৎসকরা জানান, দুটি কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। বাঁচাতে গেলে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। দক্ষিণ ভারতের একটি হাসপাতালে যান কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য। কিন্তু দালালদের খপ্পরে পড়ে ব্যর্থ হন। এই সময় আশরাফ নিজে থেকেই কানাইলালকে কিডনি দেবেন বলে জানান। কারণ দুজনের রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ। আশরাফের এই সিদ্ধান্তে পরিবারের লোকজন প্রথমে কিছুটা নিমরাজি ছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁদের বোঝাতে সমর্থ হন।
আরও পড়ুন: সিকিমে পাহাড়ি বাঁকে খাদে গাড়ি! মর্মান্তিক মৃত্যু ৫ পর্যটক ও চালকের
শেষমেশ গত মাসের ২১ তারিখে কলকাতার বাইপাসে একটি বেসরকারি হাসপাতালে আশরাফের দান করা কিডনি প্রতিস্থাপন হয় কানাইলালের শরীরে। দুজনেই এখন সুস্থ। আশরাফ বাড়ি ফিরে এসেছেন। কানাইলাল কলকাতায় আছেন। এদিন কানাইলাল জানান, ‘নতুন করে জীবন পেয়েছি। কোনও দিন আশরাফ দাদার ঋণ শোধ করতে পারব না। রক্তের সম্পর্ক, ধর্ম সবকিছু নয়। উনি আজীবন শ্রদ্ধার আসনে থাকবেন। আমার পরিবারও কৃতজ্ঞ।’ তবে আশরাফ বিষয়টি নিয়ে খুবই নির্লিপ্ত। শুধু বলছেন, ‘ওঁর পরিবারটা ভেসে যেতে বসেছিল। ওঁর মাকে আমিও মা ডাকি। ভাইয়ের জন্য সামান্য কিছু করেছি। ও সুস্থ থাকুক, এটাই দেখতে চাই।’
বিশ্বজিৎ হালদার