২০১৭ সালে তিনি পুরুলিয়ায় গিয়ে, সেখানের ছৌ নাচের (Chhau Dance) প্রেমে পড়ে যান। তখনই তিনি ঠিক করেন ছৌ নাচ শিখবেন। তার পর এক বছরের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী এই নাচের ষোলোকলা শিখে নেন তিনি। স্বপ্ন দেখেন নিজের একটি দল তৈরি করবেন। যার মাধ্যমে কাজের সুযোগ করে দেবেন বহু পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের। সেই অর্থে ডানপিটে ছেলেমেয়েদের খোঁজখবর শুরু করেন তিনি। দিতে থাকেন তাদের প্রশিক্ষণ। পাঁচ বছর আগে পাঁচ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই যাত্রা এখন অনেক বড় হয়েছে। আপাতত মোট ৫০ জন শিক্ষার্থী ওস্তাদের কাছে ছৌ নাচের তালিম নেন নিয়মিত। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা, ভিন রাজ্যে গিয়েই দর্শকদের মুগ্ধ করেন সেই সমস্ত প্রতিভাবান ছৌ নাচ শিল্পীরা। লক্ষ্য, আগামী দিনে আরও এগিয়ে যাওয়া। আরও পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের ছৌ নাচের মাধ্যমে সমাজের অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া। যে কাজ পর্যন্ত নিরন্তর করে চলেছেন তিনি।
advertisement
ওস্তাদ অর্চিষ্মান পাল বিনামূল্যে সমস্ত ছেলে মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেন। পাশাপাশি চালিয়ে যান ডানপিটে ছেলে মেয়েদের খোঁজ। তিনি বলেছেন, ‘‘ বিভিন্ন জায়গায় কত্থক, ভারতনাট্যম-এর মত অনেক নাচ শেখানো হলেও, ছৌ নাচ সেই অর্থে কোথাও শেখানো হয় না। ফলে পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী এই নাচ অনেকটই হারিয়ে যাচ্ছে। ’’ তাই তিনি এই ছৌ নাচকে যেমন আবার আগের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে চান, তেমনি এই নাচের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের জীবনমুখী করে তুলতে চান। সেই উদ্যোগেই নিরন্তর পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিয়মিত তালিম দিয়ে যাচ্ছেন ছেলেমেয়েদের। তৈরি করছেন একের পর এক শিল্পী।
আরও পড়ুন : ১২৫ বছর বয়সে ভূষিত পদ্মশ্রীতে, ১৮৯৬-তে সিলেটে জন্মগ্রহণকারী যোগী স্বামী শিবানন্দর দীর্ঘ জীবনের রহস্য কী?
বিভিন্ন গ্রামে পিছনে পড়ে থাকা শুকনো মুখগুলিকে তুলে এনে ছৌ নাচের মুখোশ এর আড়ালে আলোকিত করছেন অর্চিষ্মান । অর্চিষ্মান পাল নিজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এই মুহূর্তে তিনি ইংরেজিতে অনার্স করছেন। ছৌ নাচের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন তাঁরা। এই ওস্তাদের সান্নিধ্যে আসতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরাও। তাঁরা বলেছেন, একটা সময় তারা লম্ফঝম্পও করতেন গ্রামের কোণায় পড়ে থেকে। কিন্তু ওস্তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে তাঁরা যেমন আজ জীবনের একটা লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছেন, তেমনই পরিবারের কাছেও আশার আলো দেখাতে পেরেছেন। পরিবারও এই কাজে তাদের সঙ্গে সমান ভাবে সহযোগিতা করছে।
আরও পড়ুন : ঘূর্ণিঝড় 'অশনি'র কীভাবে নামকরণ করা হয়েছিল? এর অর্থ কী?
আরও পড়ুন : জানুয়ারিতে যে কিশোর কিশোরীরা ওমিক্রন আক্রান্ত হয়, তারা এখন কোভিড টিকা নিতে পারবে? জানুন চিকিৎসকের মত
অর্চিষ্মান পাল আরও বলেছেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে কঠোর পরিশ্রম করা মানুষের পক্ষেই সম্ভব এই ছৌ যুদ্ধনৃত্য। স্বপ্ন ছিল ওই নৃত্যে দক্ষ হওয়া ও একটি দল গঠন করার। কিন্তু এখানে তো রয়েছে ক্লাসিক্যাল ড্যান্স, কত্থক ও ভারতনাট্যম শেখার ছেলেমেয়েরা। এই ভেবে স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পথেই এলাকার পুকুরে একদল ডানপিটে ছেলের স্নান করার ভঙ্গিমা স্বপ্নপূরণের আশা দেখাল৷ তারা সকলেই প্রায় দুঃস্থ পরিবারের। তাদের পক্ষে কত্থক, ভারতনাট্যম শেখা দুষ্কর হলেও তাদের ডানপিটেপনার মধ্যে দেখতে পাই ছৌ নৃত্যের প্রতিভা। অনেক বুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি তাদের। সেখানে ছৌ নৃত্যের প্রশিক্ষণ দিতেই তাদের নৃত্যকুশলতায় সাফল্যের দিশা পাওয়া গিয়েছে।’’
(প্রতিবেদন : নয়ন ঘোষ)