সৈকত শী, চণ্ডীপুর: মাছ খাওয়ার সময় তো গলায় আমাদের অনেকেরই কাঁটা লাগে। কিন্তু আস্ত কই মাছ শ্বাসনালিতে গিয়ে যদি আটকে যায় তখন কী অবস্থা হবে ভাবুন তো একবার? হ্যাঁ, ঠিক এরকমই একটি আস্ত জ্যান্ত কই মাছ গলায় আটকে প্রাণ সংশয় জোগাড় হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুরের ব্যক্তির। চণ্ডীপুর মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালের ডাক্তারগন সফল অস্ত্রপচারের শ্বাসনালীতে আটকে যাওয়া কই মাছ বের করে প্রাণ বাঁচাল ঐ ব্যক্তির। এমন বিরল ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুর এর তাপস মাইতির সঙ্গে। ভগবানপুর থানার অন্তর্গত নছিপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর চল্লিশের তাপস মাইতি মঙ্গলবার বিকেলে মাছ ধরতে গিয়ে দাঁতে চেপে রাখা জ্যান্ত কই মাছ পিছলে গলায় শ্বাসনালিতে ঢুকে যায় আচমকা এবং সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট ও প্রবল রক্তক্ষরণ। পরিবারের লোকজন এবং পাড়া প্রতিবেশীরা তড়িঘড়ি করে তাপস মাইতিকে নিয়ে আসে চণ্ডীপুর মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে। আপদকালীন বিভাগের চার জন চিকিৎসক ও নার্সদের সফল অস্ত্রপচারের দু'ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ঐ ব্যক্তির গলা থেকে আসত কই মাছ বের করে প্রাণ ফেরান। চণ্ডীপুর মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র ইএনটি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডঃ রত্নদ্বীপ ঘোষের তত্ত্বাবধানে সিনিয়র সার্জেন ডক্টর এ. কে. গুড়িয়া, অর্থোপেডিক সার্জন ডক্টর কানাইলাল জানা এবং অ্যানাসথেসিস ডক্টর পার্থপ্রতিম দাস এর সফল প্রচেষ্টায় ট্রেডিওস্টোমি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাপস মাইতির গলা থেকে আস্ত কই মাছ বের করা হয়। আস্ত কই মাছ বের করে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়। বর্তমানে রোগীকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে এবং রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল। চণ্ডীপুর মাল্টি স্পেশ্যালিটি হসপিটাল ডাক্তারবাবুদের কথায়, যদি আপদকালীন ভাবে অস্ত্রোপচার না করা হত তাহলে তাপস মাইতির প্রাণ ফেরানো যেত না। হাসপাতালে সুপার পবিত্র জানা বলেন, 'এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বিরল! আমাদের ডাক্তারবাবু ও নার্সদের প্রচেষ্টায় সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে এবং তাতে একটি পরিবার তাদের প্রিয়জনের প্রাণ ফিরে পেল সেটি আমাদের কাছে গর্ব। চণ্ডীপুরের মত প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় আমাদের হাসপাতালে এমন পরিষেবা সাধারণ মানুষ ২৪ ঘন্টা পায় এবং আমরা যাতে মানুষের বিপদে পাশে সব সময় থাকতে পারি এই কামনা করছি।' পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এ ধরনের অস্ত্রপ্রচার বিরল। অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে গলার শ্বাসনালিতে আটকে যাওয়া আসত কই মাছ বের করে একজনের প্রাণ ফিরিয়ে দিল ডাক্তারবাবুরা। বর্তমানের রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল। প্রিয়জনের প্রাণ ফিরে পেয়েছে স্বাভাবিকভাবেই খুশি তাপস মাইতির পরিবারের লোকজনের।