আরও পড়ুন: ওমিক্রন কতটা ভয়ঙ্কর? করোনাভাইরাসের নতুন আতঙ্ক নিয়ে সতর্ক থাকুন! হু জানাল 'এই' পাঁচ তথ্য...
মারণ ভাইরাসের এই ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টটির মিউটেশন ক্ষমতা দেখে রীতিমতো মাথায় হাত বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের। তাঁদের আশঙ্কা, বাজারে এখন যে সব করোনা ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, সেই সব ভ্যাকসিন এই ভ্যারিয়ান্টকে আদৌ প্রতিহত করতে পারবে কি না। এরই মধ্যে ব্রিটেনের সংস্থা মডার্না তো জানিয়েই দিয়েছে, যে সব ভ্যাকসিন ইতিমধ্যে বাজারে রয়েছে, সেই সব ভ্যাকসিন (Omicron Which Vaccine to Work) ওমিক্রনের ক্ষেত্রে ততটাও কার্যকরী হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এর ফলে একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। এই ভ্যাকসিনগুলি ওমিক্রনের দাপট খর্ব করতে পারবে না কেন? তা হলে কি ওমিক্রনের জন্য নতুন ভ্যাকসিন বাজারে আনতে হবে? মডার্না আবার এমআরএনএ (mRNA) ভ্যাকসিন নিয়ে কথাবার্তা বলছে, সেটা আসলে কী? তাই একে একে জেনে নেওয়া যাক এই সব প্রশ্নের উত্তরগুলি।
advertisement
ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কেন কাজ করবে না এই সব ভ্যাকসিন?
আসলে করোনার এই নতুন প্রজাতির (Omicron Which Vaccine to Work) সব থেকে বেশি মিউটেশন হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) ওমিক্রনকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়ান্ট’ বা ‘ভ্যারিয়ান্ট অফ কনসার্ন’ বলে আখ্যা দিয়েছে। কারণ গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এই প্রজাতির ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের ৩০ বার মিউটেশন হয়ে গিয়েছে। আর এই স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমেই ভাইরাস মানব দেহের কোষে কোষে প্রবেশ করার রাস্তা সুগম করে তোলে। আর ভ্যাকসিন স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে আমাদের শরীরকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা প্রদান করে।
আরও পড়ুন: করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্টে আতঙ্ক, তবুও টিকা নেওয়ায় অনীহা পূর্ব বর্ধমানে
কিন্তু ওমিক্রন প্রজাতির ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিনে যে হেতু অনেক বার মিউটেশন হয়েছে, তাই গবেষকদের সন্দেহ, ভ্যাকসিন এর বিরুদ্ধে কার্যকরী ভাবে অ্যান্টিবডি গড়ে তুলতে পারবে কি না। আসলে চিনের উহানে উৎপন্ন করোনাভাইরাসের মূল স্ট্রেনটির বিষয় মাথায় রেখেই এই সব ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ বার সেই মূল ভাইরাসের ইতিমধ্যেই বহু বার মিউটেশন হয়ে গিয়েছে, যার ফলে নতুন নতুন স্ট্রেনও হাজির হয়েছে। আর এই ওমিক্রন সব থেকে আলাদা বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। তাই ভাইরাসের এই নয়া ভ্যারিয়ান্টের উপর ভ্যাকসিন খুবই কম কাজ করবে অথবা কাজ করবে না বলেই সন্দেহ বিজ্ঞানীদের।
ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের ভ্যাকসিন নিয়ে মডার্নার সতর্কবাণী কেন?
এরই মধ্যে আবার ভ্যাকিসন প্রস্তুতকারক ব্রিটিশ সংস্থা মডার্না-র সতর্কবাণী, ওমিক্রনের ক্ষেত্রে সে ভাবে কাজ করবে না এই সব ভ্যাকসিন। অর্থাৎ বর্তমানে বাজারে যে সব ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলি কোনওটাই এই ভ্যারিয়ান্টের ক্ষেত্রে তেমন কার্যকরী হবে না। মডার্নার সিইও স্টিফেন ব্যানসেল জানিয়েছেন যে, করোনার আগের স্ট্রেনগুলোর ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন যতটাই কার্যকর ছিল, এই ওমিক্রনের ক্ষেত্রে ততটা কার্যকর না-হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। শুধু তা-ই নয়, আরও সতর্কবাণী শুনিয়েছেন মডার্নার সিইও। তিনি আরও জানান যে, এই ওমিক্রনের জন্য কার্যকরী কোনও ভ্যাকসিনের ডোজ আনতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। আর ওমিক্রনের দাপুটে স্পাইক প্রোটিনের সঙ্গে যাতে লড়তে পারে, সেই জন্য বাজারে মিলছে এমন সব ভ্যাকসিনকে আগামী বছর মডিফাই করতে হবে।
ওমিক্রনের নয়া ভ্যাকসিন কত দিনের মধ্যে আসার সম্ভাবনা রয়েছে?
ইতিমধ্যেই ওমিক্রনের (Omicron Which Vaccine to Work) সঙ্গে লড়াই করতে পারবে, এমন কার্যকর ভ্যাকসিন বাজারে আনার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা মডার্না জানিয়েছে, প্রয়োজন হলে আগামী বছরের প্রথম দিকেই নতুন ভ্যারিয়ান্টের জন্য ভ্যাকসিন বাজারে আনা হতে পারে। মডার্না আগেও করোনার জন্য এমআরএনএ (mRNA) ভ্যাকসিন বানিয়েছে। মডার্নার প্রধান মেডিক্যাল অফিসার পল বার্টনও জানিয়ে দিয়েছেন যে, প্রয়োজন পড়লে তাঁদের সংস্থা আগামী বছরের শুরুতেই এমআরএনএ ভ্যাকসিন বাজারে লঞ্চ করবে। আবার আর এক ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা ফাইজার-এর তরফে জানানো হয়েছে যে, তেমন প্রয়োজন উপস্থিত হলে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ওমিক্রনের ভ্যাকসিন বানিয়ে ফেলা যাবে। এর প্রথম ডোজ পাওয়া যাবে ১০০ দিনের মধ্যেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও পর্যন্ত কোন কোন ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দিয়েছে?
এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বের মোট আটটি করোনা ভ্যাকসিনকে ছাড়াপত্র দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেগুলি হল-
এমআরএনএ শ্রেণিভুক্ত মডার্না (Moderna) ও ফাইজার (Pfizer)
ভাইরাল ভেক্টর শ্রেণিভুক্ত কোভিশিল্ড (Covishield), অক্সফোর্ড বা অ্যাস্ট্রাজেনেকা (AstraZeneca) ও জনসন অ্যান্ড জনসন (Johnson & Johnson)
ইনঅ্যাক্সিভেটেড ভ্যাকসিন শ্রেণিভুক্ত কোভ্যাকসিন (Covaxin), সিনোভ্যাক করোনাভ্যাক (Sinovac-CoronaVac) ও সিনোফার্ম (Sinopharm)।
এই তিন শ্রেণির ভ্যাকসিন কী ভাবে কাজ করে?
এমআরএনএ ভ্যাকসিন:
এমআরএনএ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে মেসেঞ্জার আরএনএ কোড থাকে। যা শরীরে প্রবেশ করে করোনাভাইরাস প্রোটিনের নতুন সংস্করণ তৈরি করে। ভ্যাকসিনেশনের পরে ইমিউন সেল স্পাইক প্রোটিন টুকরো টুকরো করে দেয় এবং অ্যান্টিবডি তৈরি হতে থাকে। পরেও যদি কেউ কোভিড ১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হন, তা হলে এই অ্যান্টিবডিই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শরীরকে সাহায্য করে।
ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন:
এটা এক ধরনের ক্যারিয়ার ভ্যাকসিন। এ ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক নয়, এমন অ্যাডিনোভাইরাসকে ভাইরাল ভেক্টর রূপে জেনেটিক্যালি তৈরি করা হয়। এই ভাইরাস কোষে পৌঁছনো মাত্রই স্পাইক প্রোটিনের প্রতিলিপি বানানোর নির্দেশ দেয়। তখন কোষের আস্তরণের উপর স্পাইক প্রোটিন তৈরি হয়। তার জবাবে শরীরের ইমিউন সিস্টেম অ্যান্টিবডি এবং ডিফেন্সিভ হোয়াইট সেল বানায়। কেউ যদি করোনাভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হন, তা হলে এই অ্যান্টিবডিই লড়াই করতে সহায়তা করে।
ইনঅ্যাকটিভেটেড ভ্যাকসিন:
এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে একটা মৃত বা সক্রিয় নয় এমন ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। আসলে এই ধরনের ভাইরাস পরিমাণে বাড়তে পারে না এবং এর জেরে অসুস্থও হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও থাকে না। এই ভ্যাকসিনের মাধ্যমে শরীরে ন্যাচারাল ইনফেকশনের সমান ইমিউন রেসপন্স তৈরি করা হয়।