রাঁচি, ঝাড়খণ্ড: রাঁচির নামকুম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ এসেছে। বড় বড় কার্টুন। কিন্তু কার্টুন খুলে ওষুধ বের করতে গিয়ে মাথায় হাত। ভিতরে সাপ। তাও যে সে সাপ নয়, অত্যন্ত বিরল প্রজাতির সাপ। ভারতে সচরাচর দেখা যায় না বললেই চলে। এই সাপের সঙ্গে মহাভারতের যুগের রাজা পরীক্ষিতের সম্পর্ক রয়েছে।
তক্ষক নাগের বংশধর: রাজা পরীক্ষিত হলেন অভিমন্যুর পুত্র। অর্থাৎ অর্জুনের নাতি। কথিত আছে, দ্বাপর যুগের শেষে তক্ষক নাগের দংশনে রাজা পরীক্ষিতের মৃত্যু হয়েছিল। রাঁচির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধের কার্টুনের ভিতর থেকে উদ্ধার হওয়া সাপের সঙ্গে তক্ষক নাগের অদ্ভুত মিল রয়েছে। তাই অনেকেই সাপটিকে তক্ষক নাগের বংশধর বলছেন।
advertisement
বিরল প্রজাতি: সাপটি তক্ষক নাগের বংশধর হোক বা না হোক, প্রজাতিতে যে অত্যন্ত বিরল তাতে সন্দেহ নেই। এমনটাই বলছেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ রমেশ। তাঁর মতে, অত্যন্ত বিরল প্রজাতি, ভারতে এই প্রজাতির সাপের দেখা খুব একটা পাওয়া যায় না। ঝাড়খণ্ডের বন্যপ্রাণীপ্রেমীরাও উচ্ছ্বসিত। তাঁরা সাপটির যত্ন-আত্তির ব্যবস্থা করছেন।
সাপটিকে বিরসা জুলজিক্যাল পার্কের স্নেক হাউজে রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে। সেখানে এর বিশেষ সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্তমানে সাপটি রয়েছে বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে। তাঁরা খুঁটিয়ে দেখছেন। আগামীকাল এটিকে স্নেক হাউজে স্থানান্তর করা হবে। ঝাড়খণ্ডে এই প্রথম এহেন বিরল প্রজাতির সাপের হদিশ মিলল। সাধারণ মানুষ বিস্মিত। এটা কোন প্রজাতির সাপ, বিষাক্ত কি না, সেই নিয়েও কৌতূহল তুঙ্গে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপটির বিজ্ঞানসম্মত নাম হল ‘অরনেট ফ্লাইং স্নেক’। হ্যাঁ ‘ফ্লাইং’, কারণ এই সাপ আকাশে উড়তে পারে। দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। গায়ের রঙ কালো, তার ওপর সাদা ছিটছিট দাগ। আকারেও লম্বা। এমন সাপ কার্টুনের মধ্যে কীভাবে ঢুকল সেটাই আশ্চর্যের। তবে এর ওড়ার ক্ষমতা নিয়েই এখন চর্চা চলছে বিস্তর।
১০০ ফুট উঁচু থেকে লাফ দিতে পারে: বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ রমেশ এই সাপের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানিয়েছেন। তিনিই বলেন, ‘অরনেট ফ্লাইং স্নেক’ ১০০ ফুট উঁচু থেলে লাফ দিতে পারে। শুধু তাই নয়, বাতাসে ভেসে চলার ক্ষমতাও রয়েছে এর। সাধারণত ঘন জঙ্গলে দেখা যায়। মূলত পোকামাকড় এবং টিকটিকিই এর খাদ্য।
এই প্রজাতির সাপ বিলুপ্তির মুখে। প্রচলিত ভাষায় একে ‘উড়ন্ত সাপ’-ও বলা হয়। তবে খুব বিষাক্ত নয়। এই সাপ দেশে ‘রেয়ার ক্যাটাগরি’তে পড়ে। তাই এর সবরকম সুরক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।