আজকের দিনে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এবং তেজস এক্সপ্রেস-এর মতো আধুনিক ট্রেনগুলি শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বে আলোচিত হয়েছে। তবে খুব কম মানুষই জানেন, ভারতের পুরনো ট্রেনগুলোর ঐতিহ্য সম্পর্কে।
আপনি কি বিশ্বাস করবেন, যদি বলা হয় যে ভারতের সবচেয়ে পুরনো ট্রেন আজও ভারতীয় রেলে পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে? এই তথ্য ভারতীয় রেলের গর্বের প্রতীক—যেখানে ঐতিহ্য, প্রযুক্তি ও আধুনিকতার এক অনন্য মিশ্রণ দেখা যায়।
advertisement
নেতাজি এক্সপ্রেস (আগের নাম ছিল কালকা মেইল) ভারতের সবচেয়ে পুরনো চলতি ট্রেন হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ঐতিহাসিক ট্রেনটি হাওড়া থেকে হরিয়ানার কালকা পর্যন্ত যাত্রা করে।
প্রথমদিকে এই ট্রেনটি কলকাতা থেকে নিউ দিল্লি পর্যন্ত চলাচল করত, কিন্তু পরবর্তীতে এর রুট হরিয়ানার কালকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা ভাল, কালকা হল কালকা-শিমলা রেলপথের শুরুর পয়েন্ট, যা চলে যায় শিমলা পর্যন্ত। এক সময় ব্রিটিশ শাসনের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল এই শিমলা।
নেতাজি এক্সপ্রেস শুধু একটি ট্রেনই নয়, এটি ভারতের রেল ইতিহাসের এক জীবন্ত নিদর্শন, যা আজও দেশের পূর্ব ও উত্তর অংশকে সংযুক্ত করে চলেছে। হাওড়া-কালকা মেইল প্রথমবার যাত্রা শুরু করেছিল ১ জানুয়ারি, ১৮৬৬ সালে এবং আজ পর্যন্ত এটি ১৫৯ বছর ধরে ভারতীয় রেলওয়ের সেবা দিয়ে চলেছে।
যেমন আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এই সবচেয়ে পুরনো ট্রেনটি প্রথমে কলকাতা ও দিল্লির মধ্যে চলত এবং সেই সময় একে বলা হত ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে মেইল। পরে এর নাম হয় হাওড়া-কালকা মেইল এবং সাম্প্রতিককালে, ২০২১ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে ঐতিহাসিক কারণবশত এই ট্রেনের নামকরণ করা হয় নেতাজি এক্সপ্রেস।
ধারণা করা হয় যে, ১৯৪১ সালে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে পালানোর সময় এই ট্রেনেই চড়ে ছিলেন। তিনি ধনবাদের কাছে গোমো স্টেশন (বর্তমান ঝাড়খণ্ডে) থেকে এই ট্রেনে উঠেছিলেন। ২০১১ সালে এই ঐতিহাসিক ট্রেনটি একটি মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। উত্তরপ্রদেশের ফতেপুর জেলার মালওয়ান স্টেশনে ট্রেনটির লাইনচ্যুতি হয়, যাতে ৭০ জন নিহত এবং ৩০০ জন আহত হন।
আরও পড়ুন- এই ‘বিশেষ পোষাক’ পরলে চোখের সামনে হাজির হবেন মহাকালী, দেবীকে মনে হবে জীবন্ত
নেতাজি এক্সপ্রেস শুধুই একটি ট্রেন নয়, এটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, ঐতিহাসিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সমসাময়িক আধুনিক রেলসেবা—এই তিনটির এক অনন্য সংযোগ রচনা করে চলেছে।