৬২৫ তম বর্ষে পদার্পন করল শ্রীরামপুর মাহেশের জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা। মাহেশে আজও মেনে চলা হয় পুরনো রীতি ৷ স্নানপিঁড়িতে জগন্নাথের সঙ্গে স্নান করেন বলরাম আর শুভদ্রাও ৷ সেই মতো বুধবার সকাল থেকেই জগন্নাথদেবের স্নান মঞ্চ ঘিরে চলছে প্রস্তুতি ৷
প্রথা মতো এখনও ২৮ ঘড়া গঙ্গাজল ও দু’মণ দুধ দিয়ে স্নান করানো হয় বিগ্রহকে ৷ ভোর থেকে তিন বিগ্রহকে মন্দিরের বাইরে বারান্দায় এনে রাখা হয়। স্নানযাত্রার পর তিন বিগ্রহকে কম্বলে মুড়ে মন্দিরের গর্ভগৃহে রাখা হবে। এরপর রথের আগের দিন জগন্নাথদেবকে পরানো হবে রাজবেশ । ভগবানের সেই রূপকে তখন নবযৌবন বলা হয়। এরপর রথযাত্রার দিন তিন বিগ্রহ রথে চেপে মাসীর বাড়ি উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।
advertisement
গত বছরও মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের মধ্যেই অস্থায়ী ভাবে তৈরি হয়েছিল জগন্নাথের মাসির বাড়ি । প্রথা মাফিক, সোজা রথের দিন জগন্নাথ যান তাঁর মাসির বাড়িতে । ফিরে আসেন উল্টো রথের দিন । এ বছরও নিয়ম রক্ষার্থে মন্দিরের মধ্যেই অস্থায়ী ভাবে মাসির বাড়ি তৈরি করা হয়েছে । সেই মন্দিরেই পুজার্চনা করা হবে নিয়মমাফিক । শুধুমাত্র নারায়ণ শিলাকে মাসির বাড়ি পাঠানো হবে ।
মাহেশের রথ পুরীর মতো কাঠের নয় । এটি সম্পূর্ণ লোহার রথ । যা ১৩৬ বছরের পুরনো । পুরীর মতো জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার আলাদা আলাদা রথ নেই এখানে । একটি রথেই তিন দেবতা পূজিত হন । প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার এই রথ আগে কাঠের ছিল। যদিও দীর্ঘ দিন ধরে সেই রথ পুজিত হতে হতে কাঠের সেই রথে ক্ষয় ধরতে শুরু করে। শ্যামবাজারের বসু পরিবারের সাথে মাহেশের অধিকারী পরিবারের দীর্ঘ দিনের যোগাযোগ। তাঁরা জগন্নাথ মন্দিরের সেবক। তাঁরা ইচ্ছা প্রকাশ করেন নতুন রথ তৈরি করে দেবেন। ১৩৫ বছর আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কাঠের রথ বদলে ফেলা হবে। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কাঠের বদলে রথ হবে লোহার। সেই রথ এখনও যা পুজিত হয়ে আসছে৷
১৩৫ বছরের এই রথ সেই সময় তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ২০ হাজার টাকা। মাহেশের এই রথ পরিচিত নীলাচল নামে। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু একাধিকবার এই রথ যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি মাহেশের নাম দেন নব নীলাচল। সেই অনুযায়ী মাহেশের রথ পরিচিত নীলাচল রথ নামে। ঐতিহাসিক এই রথ যাত্রায় রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবও যোগদান করেছিলেন। এই রথে প্রতি বছর জগন্নাথ, বলরাম, সুভ্রদা'কে বসানোর পরে একটি বিশেষ পুজো করা হয়। সেই পুজো দামোদর পুজো নামে খ্যাত। রথ যাত্রায় এখানে ভোগ হিসেবে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, আলুরদম, ধোঁকার ডালনা, পনীর ও পায়েস। সোজা রথ থেকে উল্টো রথ অবধি প্রতিদিন নানা রকমের পদ রান্না করে দেওয়া হয় জগন্নাথ-বলরাম-সুভ্রদা'কে।