তদন্ত শুরু হয় কোরতাগেরে তালুকের চিম্পুগনাহল্লি গ্রামে। প্রায় ৫ কিলোমিটারের বিস্তীর্ণ এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ উদ্ধার করে ১৯টি আলাদা স্থান থেকে দেহের টুকরোগুলি। কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি মাথা। দেহের বাকি অংশগুলো দেখে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেন, এটি একজন ৪৭ বছর বয়সী মহিলার দেহ। হাত ও পায়ে থাকা গয়না দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল, এটি কোনো লুটের ঘটনা নয়।
advertisement
পুলিশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মৃতদেহটি শনাক্ত করা। কোনো সিসিটিভি ফুটেজ বা প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় তদন্ত থমকে গিয়েছিল। তবে পুলিশ হাল ছাড়েনি। তারা তুমাকুরু জেলার নিখোঁজ মহিলাদের তালিকা খতিয়ে দেখতে শুরু করে। আর সেখানেই উঠে আসে লক্ষ্মীদেবাম্মা নামের এক গৃহিণীর নাম। তার স্বামী বাসভরাজ তার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ৩ আগস্ট তিনি তার মেয়ে তেজাউই-এর বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, এরপর আর ফিরে আসেননি।
দুদিন পর, কোরতাগেরের একটি নির্জন এলাকা থেকে মহিলার মাথা উদ্ধার করা হয়। স্বামী বাসভরাজ মাথাটি শনাক্ত করেন। পুলিশ নিশ্চিত হয় যে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং এর পেছনে কোনো পরিচিত ব্যক্তি জড়িত।
আরও পড়ুন: বিদেশে জন্ম নেওয়া সন্তানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়া কি সম্ভব? জানুন নিয়ম কী বলছে…
তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেয় একটি সাদা এসইউভি গাড়ি। ৩ আগস্ট দুপুরে হনুমানতপুরা থেকে কোরতাগেরের দিকে যাওয়া এই গাড়িটির সামনে-পেছনে দুটি ভিন্ন ও ভুয়ো নম্বর প্লেট ছিল। পুলিশের চোখে সন্দেহ জাগে গাড়ির অদ্ভুত পরিবর্তনের বিষয়টি। আসল নম্বর প্লেট খুঁজে বের করে পুলিশ জানতে পারে, গাড়িটি সতীশের নামে রেজিস্টার করা। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, কেন সে ভুয়ো নম্বর প্লেট ব্যবহার করছিল?
সতীশের মোবাইল রেকর্ডে দেখা যায়, ৩ ও ৪ আগস্ট তার ফোন বন্ধ ছিল। স্থানীয়রা জানায়, এই সময়কালে তার জমিতে এসইউভি গাড়িটি পার্ক করা ছিল। পুলিশ দ্রুত সতীশ এবং তার সঙ্গী কিরণকে চিকমাঙ্গালুরুর একটি মন্দির থেকে গ্রেফতার করে। এরপরই সামনে আসে আসল তথ্য।
এসইউভি গাড়িটি মূলত কিনেছিলেন ড. রামচন্দ্রাইয়া, যিনি পেশায় একজন দাঁতের ডাক্তার এবং নিহত লক্ষ্মীদেবাম্মার মেয়ে তেজাউই-এর স্বামী। তিনি সতীশের নামে গাড়িটি রেজিস্টার করিয়েছিলেন। পুলিশ ড. রামচন্দ্রাইয়াকে ডেকে পাঠায় এবং সতীশ ও কিরণের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। চাপের মুখে তারা খুনের কথা স্বীকার করে।
খুনের কারণ ছিল ড. রামচন্দ্রাইয়ার সন্দেহ। তার ধারণা ছিল, শাশুড়ি লক্ষ্মীদেবাম্মা তার বিবাহিত জীবনে হস্তক্ষেপ করছেন এবং তার স্ত্রীকে দেহ ব্যবসায় উৎসাহিত করছেন। এতে তাদের সংসার ভেঙে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল তার। তাই তিনি শাশুড়িকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
৬ মাস আগে থেকেই তিনি এই খুনের ছক কষেন। সতীশ ও কিরণকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে এই কাজে শামিল করেন। ৩ আগস্ট, লক্ষ্মীদেবাম্মা যখন তার মেয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, তখন ড. রামচন্দ্রাইয়া তাকে গাড়ি করে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। গাড়িতে আগে থেকেই সতীশ ও কিরণ লুকিয়ে ছিল। গাড়িতে ওঠার পর তারা শ্বাসরোধ করে লক্ষ্মীদেবাম্মাকে হত্যা করে।
পরের দিন, সতীশের জমিতে নিয়ে গিয়ে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে দেহটিকে ১৯টি টুকরোয় কেটে ফেলে, যেন কোনো পেশাদার এই কাজ করছে। তারপর তারা দেহের টুকরোগুলি ১৯টি ভিন্ন ভিন্ন নির্জন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়, যাতে কোনো প্রমাণ না থাকে।
পুলিশ তিন অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করেছে। এই ভয়াবহ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড পুরো কর্ণাটকে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।