অ্যান্টার্কটিকার কাছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কেন কমছে?
অ্যান্টার্কটিকার বিশাল বরফস্তর এক ধরনের ‘গ্রাভিটেশনাল ম্যাগনেট’—নিজের দিকে জল টেনে রাখে। কিন্তু বরফ গলতে শুরু করলে—
- বরফের ভর কমে,
- তার অভিকর্ষ শক্তি দুর্বল হয়,
- আর আশপাশের জল সরে যেতে থাকে।
ফলে স্থানীয় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার বদলে কমে যায়।
advertisement
নতুন গবেষণায় কী জানা গেল?
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী দল বরফস্তর, পৃথিবীর ম্যান্টল, বায়ুমণ্ডল ও সমুদ্র—সব মিলিয়ে একটি বিস্তৃত সিমুলেশন চালান। তাঁদের হিসেব—
- ২১০০ সালের মধ্যে শুধুমাত্র অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলেই বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠ ১০ সেমি (৪ ইঞ্চি) বাড়বে।
- ২২০০ সালে এই বৃদ্ধি ১ মিটার (৩.৩ ফুট)-এ পৌঁছাতে পারে।
এতে গ্রিনল্যান্ডের গলন বা উষ্ণ সমুদ্রের সম্প্রসারণ ধরা নেই। সেই দু’টি যোগ করলে সমুদ্রপৃষ্ঠ আরও প্রায় দ্বিগুণ বাড়তে পারে।
সমুদ্র এক সমানভাবে কেন বাড়ে না?
সমুদ্র কোনও বাথটাবের মতো সমান নয়। তিন প্রধান শক্তি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা নির্ধারণ করে—
- অভিকর্ষের পরিবর্তন
- পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষের সরে যাওয়া
- বিশ্বজুড়ে সমুদ্রজলের পুনর্বণ্টন
কোথায় সবচেয়ে বেশি বাড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠ? (২২০০ সালের অনুমান)
(অ্যান্টার্কটিকা থেকে গলনের প্রভাব ধরে)
| অঞ্চল | সম্ভাব্য বৃদ্ধি |
|---|---|
| ভারত মহাসাগর | ১.৫ মিটার |
| প্রশান্ত মহাসাগর | ১.৫ মিটার |
| পশ্চিম আটলান্টিক | ১.৪–১.৫ মিটার |
| অ্যান্টার্কটিকার কাছে | সমুদ্রপৃষ্ঠ কমবে |
| উত্তর গোলার্ধের উপকূলীয় শহর | গড়ের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি |
টাকা বাড়বে! Gen z-রা অভ্যাস গড়ে তুলুন শুরু থেকেই, ৮টি জরুরি আর্থিক পরামর্শ মেনে চললেই ধনী হবেন
বেড়েই চলেছে দাম! আজ ৫ লক্ষ টাকার সোনা কিনলে ২০৩০ সালে তার দাম কত হবে? বিনিয়োগের আগে জেনে নিন
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচ অঞ্চল
- ভারত ও বাংলাদেশের উপকূল
- ক্যারিবিয়ান দ্বীপ রাষ্ট্র
- মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ ও মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল
- ইন্দোনেশিয়া–মালয়েশিয়া–থাইল্যান্ডের উপকূলীয় শহর
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল
এই অঞ্চলগুলিতে জনসংখ্যার চাপ, ভূমি নিমজ্জন, এবং উপকূল-ভাঙন ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে।
ধীরগতির ‘রক্ষাকবচ’ কী কী?
বিজ্ঞানীরা দু’টি সাময়িক রক্ষাকারী প্রভাব শনাক্ত করেছেন—
- আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ড: বরফের চাপ কমলে ভূমি ধীরে ধীরে উঁচু হয়, সাময়িকভাবে বরফকে গরম জল থেকে দূরে রাখে।
- ঠান্ডা মিষ্টি জল: বরফ গলে যে ঠান্ডা জল পড়ে, তা আশপাশের সমুদ্রকে সাময়িকভাবে ঠান্ডা করে গলন কমায়।
তবে এগুলোর কোনওটিই দীর্ঘমেয়াদে বিপর্যয় ঠেকাতে পারবে না—কেবল গতি কিছুটা কমাতে সক্ষম।
যেসব অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে
- ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ উপকূল
- ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের নিম্ন উপকূল
- ক্যারিবিয়ান ও মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল
- উত্তর অস্ট্রেলিয়ার উপকূল
কোটিকোটি মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এখন বিশ্ব কী করতে পারে?
গবেষণা স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিচ্ছে—
যদি দ্রুত বৈশ্বিক নির্গমন কমানো না হয়, পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার দ্রুত গলন থামবে না। এরপর গলতে শুরু করবে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকা—যা আকারে আরও বড় এবং অনেক বেশি বিপজ্জনক।
বিশ্বের ভবিষ্যৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ নির্ভর করছে আজকের পদক্ষেপের ওপর—এ কথা আর কোনওভাবেই এড়ানো যাবে না।
