জর্জিয়া ভ্রমণের আদর্শ সময়:
নিজেদের ভ্রমণ পরিকল্পনার উপর এটা নির্ভর করবে। যাঁরা পর্বত দেখতে পছন্দ করেন আর হাইকিং করতে চান, তাঁদের জন্য বছরের জুন, জুলাই এবং অগাস্ট মাসটা আদর্শ হবে। তবে কম উচ্চতা ভ্রমণের ক্ষেত্রে গরমের মাসগুলি একটি সমস্যার হতে পারে। বলে রাখা ভাল যে, জর্জিয়ার প্রধান তিনটি শহর – তিবলিসি, কুতাইসি এবং বাতুমিতে অসহ্য গরমে কিন্তু প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠতে পারে। যাঁরা শহুরে জীবন পছন্দ করেন এবং মরশুমের অতিরিক্ত খরচ এড়াতে চান, তাঁদের জন্য আদর্শ হতে পারে মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস।
advertisement
Photo: Shutterstock
তবে এখানকার শীতের মরশুম দীর্ঘ এবং প্রবল হয়। নভেম্বর থেকে মার্চ মাসটা তাই এড়িয়ে চলাই ভাল। এই সময় বেশিরভাগ ভ্রমণের পরিকাঠামোই বন্ধ থাকে এবং উচ্চ ককেশাস অঞ্চল দুর্গম হয়ে ওঠে। শীতের মরশুমে মোটামুটি ভাবে ফাঁকাই থাকে এই দেশ। কারণ পর্যটকরা সেভাবে আনাগোনা করেন না। হোটেলের দরও থাকে বেশ কম।
জর্জিয়ায় কত সময় কাটানো উচিত?
জর্জিয়া ঘোরার জন্য অনেকটাই দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় পর্যটকদের। তবে চার দিনের কম সময় এখানে থাকার কোনও মানে হয় না। কম করে একটা সপ্তাহ এই দেশে না কাটালেই নয়। তিবলিসি শহরকে জানার জন্য হাতে তো সময় রাখতেই হবে। এছাড়া দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতে এবং পাহাড়ি এলাকায় ঘোরার জন্যও কয়েকটা দিন হাতে রাখা উচিত।
জর্জিয়ায় পৌঁছনোর উপায়:
অবস্থানের কারণে এই দেশে পৌঁছনোর জন্য বিমানই একমাত্র ভরসা হতে পারে। অর্থাৎ এই দেশে পৌঁছনো অতটাও সহজ নয়। তিবলিসির আধুনিক বিমানবন্দর দিয়ে ইউরোপের প্রধান শহরগুলিতে প্রতিদিন প্রচুর বিমান যাতায়াত করে। এছাড়াও পশ্চিম এশিয়া এবং এশিয়ার দেশগুলিতেও প্রতিদিন চলাচল করে বিমান।
জর্জিয়ায় ভ্রমণ করার উপায়:
একবার জর্জিয়া পৌঁছে গেলে আর কোনও অসুবিধা নেই। দুটো পথ খোলা থাকে। আসলে বেসরকারি মিনিবাসে চেপে ঘোরা যাবে এই দেশে। যদিও তা বিশেষ রুটে চলাচল করে। কিংবা আরও একটা পথ খোলা রয়েছে। একটি গাড়ি ভাড়া করে নিজে সেই গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়ানো যেতে পারে। যদিও এই উপায়টির জন্য খরচ একটু বেশিই পড়ে। তবে স্বাধীনতা কিন্তু থাকে। তবে বেশিরভাগ পর্যটক একটাই মাত্র ট্রেন পরিষেবার উপর নির্ভর করে থাকেন। তিবলিসি থেকে বাতুমি পৌঁছনোর তুলনামূলক দ্রুত উপায় এটিই। তবে পাহাড়ি অঞ্চলে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে ইন্টারনাল ফ্লাইটের উপর নির্ভর করা যেতে পারে। এতে সময় অনেকটাই বাঁচবে।
তিবলিসি ভ্রমণের জন্য আদর্শ হল টু-লাইন মেট্রো সিস্টেম। এর পাশাপাশি Yandex, Bolt অথবা Maxim-এর মতো ট্যাক্সি পরিষেবা অত্যন্ত সাশ্রয়ী। মেট্রোয় চেপে যেখানে যাতায়াত করা যায় না, সেখানে ট্যাক্সিই ভরসা।
জর্জিয়ায় কী কী করা যেতে পারে?
রাজধানী তিবলিসিতে রয়েছে প্রচুর গির্জা। আসলে এটি একটি ‘সেমি-রেনোভেটেড’ পুরনো শহর। কেবল কারের মাধ্যমে সোলোলাকি রিজ থেকে শহরের ব্যাপক ভিউ পাওয়া যাবে। দেশের রাজধানী থেকে কেউ ডে-ট্রিপে যেতে চাইলে বেরিয়ে পড়তে পারেন হাই ককেশাসের Stepantsminda শহরতলির উদ্দেশ্যে। এটাই হতে পারে জীবনের সবথেকে স্মরণীয় রোড ট্রিপ। একবার সেখানে পৌঁছলে বরফাবৃত শৃঙ্গ মাউন্ট কাজবেকের সঙ্গে পাহাড়ি গির্জার দৃশ্য উপভোগ করা যাবে।
এই দেশে ভ্রমণের জন্য কত খরচ পড়বে?
ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডের নিরিখে দেখতে গেলে জর্জিয়া ভ্রমণ বেশ সস্তার হতে পারে। তবে এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে ভ্রমণের তুলনায় কিন্তু জর্জিয়া ভ্রমণ খরচবহুল হতে পারে। যেহেতু পর্যটন ইন্ডাস্ট্রি উন্নত হচ্ছে, আর স্ট্যান্ডার্ডেরও ক্রমাগত বিকাশ হচ্ছে, তাই এখানে খরচও বেশ বাড়ছে।
আবার ব্যাকপ্যাকারদের জন্যও আদর্শ হতে পারে জর্জিয়া। তাঁদের জন্য রয়েছে বেশ পারিবারিক হোমস্টে এবং সমসাময়িক হোস্টেলও। যদিও এখানকার গড় হোটেল খরচ ৪০ ইউরো বা ৪৬ মার্কিন ডলার থেকে ৬০ ইউরো বা ৬৭ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এখানে রয়েছে শর্ট-টার্ম অ্যাপার্টমেন্টও। যদিও এ দেশে খানাপিনার খরচ বেশ সস্তাই। দেশের বেশিরভাগ অংশে মাত্র ১০ ইউরো বা ১১.৫০ মার্কিন ডলার খরচ করলেই মিলবে ভাল নৈশাহার।
জর্জিয়া ভ্রমণের জন্য কি ভিসা লাগবে?
১০০টিরও বেশি দেশের মানুষ জর্জিয়ায় ভিসা-ফ্রি ভ্রমণ করতে পারবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইজরায়েল, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং স্যুইৎজারল্যান্ড এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর যেসব দেশের নাগরিকদের ভিসার প্রয়োজন, তাঁদের এর জন্য খরচ পড়বে ২০ মার্কিন ডলার। ভারতীয়রা এই তালিকাতেই পরে ৷ তবে জর্জিয়ার ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’ পেতে হলে ভ্যালিড শেনজেন, ইউএস অথবা ইউকে ভিসা আপনার থাকা প্রয়োজন ৷ জর্জিয়ার e-Visa Portal-এর মাধ্যমে ভিসার আবেদন জানানো যেতে পারে। সব ডকুমেন্ট ঠিকঠাক থাকলে ৫ দিনের মধ্যেই চলে আসবে ই-ভিসা ৷