এই প্রসঙ্গে স্মরণে রাখতে হবে যে অষ্টমী তিথিটি দেবী দুর্গার অতীব প্রিয়। এই তিথিতে যে ভক্ত তাঁর আরাধনা করেন, তাঁকে তিনি সর্ব বিপদ থেকে রক্ষা করেন, পূর্ণ করেন তাঁর সকল মনোবাঞ্ছা। সেই দিক থেকে দেখলে শুধু মহাপূজাকালীন অষ্টমী তিথি নয়, প্রতি মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতেই দেবীর আরাধনার বিধান রয়েছে শাস্ত্রে। এই ব্রতকে বলা হয়ে থাকে মাসিক দুর্গাষ্টমী ব্রত। জেনে নেওয়া যাক কেন প্রতি মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে উদযাপিত হয় এই ব্রত, কী ভাবেই বা নিষ্ঠাচারে পালন করতে হয় তা!
advertisement
মাসিক দুর্গাষ্টমী ব্রতের মহিমা
দেবী দুর্গার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গেলে সবার আগে উঠে আসে মহিষাসুরের কথা। কেন না, এই দুর্দান্ত অসুরকে দমন করার জন্যই আবির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী। সেই আখ্যান সবিস্তারে না বললেও চলে, বাঙালি মাত্রই তা শুনে আসছে ছোট থেকে। শুধু সংক্ষেপে এটুকু উল্লেখ করতেই হয় যে মহিষাসুরের অত্যাচারের কথা শুনে ক্রুদ্ধ শিবের ত্রিনয়ন থেকে নির্গত হয়েছিল তেজোরাশি। দেখতে দেখতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং অপর দেবতাদের তেজও সেই জ্যোতির সঙ্গে মিলিত হয়, প্রকট হয় এক বিশাল অগ্নিময় সত্ত্বা। বলা হয়, শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতেই ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে এই সম্মিলিত তেজোরাশি নারীর রূপ ধারণ ধারণ করেছিল, অর্থাৎ এই তিথিতেই প্রথম আবির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী। সেই কথা স্মরণে রেখে প্রতি মাসের শুক্ল অষ্টমী তিথিতে মাসিক দুর্গাষ্টমী ব্রত উদযাপনের প্রচলন হয়েছে।
কী ভাবে পালন করতে হয় এই ব্রত
যে কোনও ব্রত উদযাপনের মূল কথা শুদ্ধাচার, সংযম এবং উপবাস। এই তিথিতে ভক্তেরা সকালে স্নান সেরে ফুল, চন্দন, সিঁদুর, ফল, যব প্রভৃতি অর্ঘ্য হিসেবে অর্পণ করেন দেবীকে। সারা দিন উপবাসে থাকতে হয়। এই ব্রতের দিন শ্রীশ্রীচণ্ডী শ্রবণ এবং পাঠ অতীব পুণ্যদায়ক বলে বিবেচিত হয়। অনেকে তা দিবাভাগে পাঠ বা শ্রবণ করেন, অনেকে সায়ংকালে পাঠ বা শ্রবণ করে উপবাস ভঙ্গ করেন। কাছাকাছি শক্তিমন্দির থাকলে অনেকে সন্ধ্যাবেলায় সেখানে পূজাও দেন।
এই তিথিতে আমিষ ভক্ষণ এবং মদ্যপান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। এই মাসে অষ্টমী তিথি শুরু হয়েছে সোমবার রাত ১২টা ০১ মিনিট থেকে, চলবে ২১ এপ্রিল রাত ১২টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত। এই সময় মিলিয়ে উপবাস এবং ব্রতপালন কর্তব্য।