সালটা ২০১৭, অগাস্ট মাস। সেবার কয়েকদিন জুড়েই পাহাড়ে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে বিনয় তামাংকে। অগাস্টের এক বৃষ্টিভেজা দুপুরে এক অখ্যাত পাহাড়ি গ্রামে দেখা মিলেছিল তার। চুলে কলপ করা, নিজেকে চিরতরুণ দেখতে চাওয়া বিমল গুরুংয়ের সেই সময়ের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সৈনিক বলেছিলেন, "রাজনীতিতে চিরশত্রু বলে কিছুই নেই।"
আসলে প্রশ্ন ছিল, বিমল গুরুং যখন পাহাড়ছাড়া হয়ে বসে আছেন তখন আপনি পাহাড়ে নিজস্ব ঘেরাটোপে কীভাবে বসে আছেন? যদিও যে সন্দেহ ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে গোটা পাহাড় জুড়ে ঘুরছিল বিনয় তামাং কি আসলে বিমল গুরুং থেকে দূরত্ব বজায় করছেন?
advertisement
সেই উত্তর অবশ্য পাওয়া গিয়েছিল ওই দিনের সাক্ষাৎ পর্বের ঠিক ১১ দিন পরে। যেদিন নবান্নে এসে সরকারের সাথে বৈঠক করেছিলেন বিমল গুরুংয়ের ডানহাত বিনয় তামাং।
২০১৯ এর লোকসভা ভোট। পাহাড় জুড়ে ব্যাপক প্রচার শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস। সঙ্গে ছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয়-অনীতপন্থী দল। সেই সময় দার্জিলিং বিধানসভা আসনের প্রার্থী ছিলেন বিনয় তামাং। লোকসভা আসনের প্রার্থী ছিলেন অমর রাই। ফল বেরোলে দেখা যায়, দু'জনেই পরাস্ত হয়েছেন। ভানু ভবনের কাছে এক হোটেলে অনুরাগীদের নিয়ে বসে ছিলেন বিনয়-অনীত। রাজনৈতিক ধাক্কা খেয়ে কি আপনারা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমলপন্থীদের সাথে মিশে যাবেন? বিনয় তামাংয়ের উত্তর ছিল, "রাজনীতিতে চিরশত্রু বলে কিছুই হয় না।"
ডালির এই যুবকের কাউকে চিরশত্রু না ভাবার প্রসঙ্গ আবার উঠে এসেছে বিনয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায়। আর এভাবেই তিনি রহস্য বাড়িয়ে দিয়েছেন। ২০০৭ সালের ৭ অক্টোবর পাহাড়ে আত্মপ্রকাশ করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। দলে সহ সম্পাদক হয়ে যান ব্লুমফিল্ড বস্তি এলাকার ছেলে বিনয় তামাং।
একাধিক মামলা তাঁর নামে। ২০১৩ সালে শেষবার গ্রেফতার হন। তারপর নানা উত্থান পতন দেখেছে পাহাড় এই বিনয়কে ঘিরে। ২০১৯ সালে ভোটে লড়ার জন্যে জিটিএ চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেন। দায়িত্ব নেন অনীত থাপা। প্রশাসন সামলান অনীত, দল সামলান বিনয়। অনেকের মতে, অনীত ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন পাহাড়ে। তাই দূরত্ব বাড়ছিল দু'জনের। অনেকে আবার বলছেন, বিনয় তামাং যোগ দেবেন তৃণমূলে। কেউ আবার বলছেন তিনি চলে যাবেন বিমল গুরুংয়ের কাছে। এই রহস্যই বিনয় তামাংয়ের কথায় উঠে এসেছে বারবার, "রাজনীতিতে চিরশত্রু বলে কিছু নেই। রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছুই নেই।"