দুটি নদীর মাঝে— এক পাশে মহানন্দা, অন্য পাশে মহিষমারি— দাঁড়িয়ে আছে এই অনন্য মন্দিরটি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝখানে গড়ে ওঠা এই সূর্য মন্দির উত্তরবঙ্গের একমাত্র সূর্য উপাসনাস্থল হিসেবে এখন তীর্থক্ষেত্রের মর্যাদা পেয়েছে। ছট পুজোর সময় এখানে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে।
১৯৯৬ সালে প্রথম সূর্য মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয় গীতা দেবী ছট ঘাটে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে শিলিগুড়ি জল সরবরাহ ও পরিবেশ উন্নয়ন দপ্তর (এসজেডিএ)-এর উদ্যোগে মন্দিরটির পুনর্নির্মাণ করা হয়। সেই সময়ের এসজেডিএ চেয়ারম্যান এবং বর্তমান শিলিগুড়ি মেয়র গৌতম দেবের বিশেষ উদ্যোগে মন্দিরটি নতুন রূপে সজ্জিত হয়। সেই থেকে এই মন্দির হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গবাসীর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু।
advertisement
এ বছরও ছট পুজোকে কেন্দ্র করে চলছে জোর প্রস্তুতি। ২৭ ও ২৮ অক্টোবর সূর্যদেবের আরাধনায় ভোরের নদীতীরে ভক্তদের ঢল নামবে। মন্দির কমিটির অধ্যক্ষ রমেশ সাহ জানান, প্রায় দেড়শো ছট ব্রতী এই বছর গীতা দেবী ঘাটে পুজো করবেন। ঘাটের রংয়ের কাজ, প্যান্ডেল তৈরি, আলোকসজ্জা— সবই চলছে পুরোদমে।
পুজোর দিন মন্দির প্রাঙ্গণে থাকে নানা সামাজিক উদ্যোগও। আয়োজিত হয় যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণ, এবং শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ। দূরদূরান্ত থেকে আগত ভক্তদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। শহর শিলিগুড়ি থেকে শুরু করে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, এমনকি পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহার থেকেও ভক্তরা এখানে ছট পুজো করতে আসেন।
তবে আনন্দের সঙ্গে আছে কিছু দুশ্চিন্তাও। মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মহানন্দা নদী প্রতি বছর নিজের গতিপথ কিছুটা বদলায়, ফলে ঘাটের অংশ বিশেষ ধসে পড়ে বা তলিয়ে যায় জলে। যেহেতু ঘাটটি এখনো কাঁচা, তাই প্রতিবছর নতুন করে মাটি ফেলে ও জেসিবি দিয়ে ঘাট তৈরি করতে হয়। মন্দির কমিটির অধ্যক্ষ রমেশ সাহ জানান, স্থায়ীভাবে যদি ঘাট পাকা করা যায়, তবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই এসজেডিএ চেয়ারম্যান দিলীপ দুগার ও শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবকে অবগত করা হয়েছে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আপাতত ভক্তরা অপেক্ষা করছেন সেই দিনের, যেদিন সূর্যোদয়ের প্রথম আলো পড়বে মহানন্দার জলে, আর তার প্রতিফলনে ভাসবে উত্তরবঙ্গের এই একমাত্র সূর্য মন্দির— যেখানে প্রকৃতি ও বিশ্বাসের মিলনে সৃষ্টি হয় আলোর এক অপার মহিমা।





