গোবরভাঙার বেরগুম পঞ্চায়েতের পেয়ারাতলার বাসিন্দা কুশল মণ্ডলের ভাগ্যের সঙ্গে প্রতিদিনের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলে। পরিবারে তাঁর বাবা, মা ভাই রয়েছেন। বাবা ওষুধের দোকানের কাজ করেন। অভাবের সংসারে পড়াশোনা করে বড় ছেলে কুশল হাল ধরবে বলেই প্রত্যাশা ছিল সকলের। ২০১৫ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সেই স্বপ্ন কিছুটা সত্যি হতে যাচ্ছিল। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে ফুটবল খেলতে গিয়ে পাল্টে যায় জীবন। মাঠে পড়ে কোমর থেকে দু’পায়ের আঙুল পর্যন্ত শক্তি হারান তিনি।
advertisement
চিকিৎসার জন্য প্রথমে এনআরএসে গেলে কুশলের অস্ত্রোপচার হয়। অভিযোগ, তার পর কোমর থেকে পা পর্যন্ত প্লাস্টার করে, রিপোর্টের টিবি না এলেও যক্ষ্মা রোগের ওষুধ খাওয়ানো হয়ে তাঁকে। এই ভুল চিকিৎসায় ক্রমশ খারাপ হতে থাকে তাঁর শরীর বলে অভিযোগ। শেষে এক প্রকার প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন কুশল। ছ’ মাস পর ঠাকুরনগরের এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের চিকিৎসায় তিনি ফের কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। এইভাবে পেরিয়ে যায় ২০১৮ সাল। তারপর এসএসকেএমে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় এংঙ্কাইলোসিস স্পন্ডেলাইসিসের আক্রান্ত কুশল। তার পর কখনও আরজিকর, কখনও এসএসকেএম হাসপাতালে দৌড়ে শেষে প্রায় দু’বছর চিকিৎসার পর ঠিক হয় আর জি করে তাঁর প্রথমে কোমর ও হাটু রিপ্লেসমেন্ট হবে। কিন্তু সেখানেও নেমে আসে বাধা, অস্ত্রোপচারে নির্ধারিত দিনের আগেই করোনাকালের লকডাউন শুরু হয়। ফলে অপারেশন না হয়ে হাসপাতালেই গোটা করোনার সময় কাটে তাঁর।
আরও পড়ুন : অতীতের জৌলুস কমলেও অগণিত ভক্ত সমাগম হয় ২০০ বছরের প্রাচীন এই শিবমন্দিরে
প্রথম ধাপের লকডাউনের পর তার হাঁটুর অস্ত্রোপচার হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু পরে জানা যায় সফল হয়নি। তাই দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারে করা হয়। এইভাবে হাসপাতালেই তার কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় বছর। শেষে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে কলকাতার একটি নামি সরকারি হাসপাতালে কুশলের ডান পায়ের হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়। ক্রাচে ভর দিয়েই কোনরকমে জীবনযুদ্ধ শুরু করে এই যুবক। এত লড়াইয়ের মাঝেও তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে সে ট্রাই সাইকেলে চড়ে অনলাইন ডেলিভারি সংস্থার কাজ করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা হাবরা-সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় এই তিন চাকার বাহনে চেপেই নিজের লক্ষ্যে অবিচল কুশল মণ্ডল।