পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের রাজধানী শহর রাঁচি থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে খুন্তি জেলায় রয়েছে অদ্ভুতুড়ে এই গ্রাম। আসলে এই গ্রামের প্রতিটি বাড়ির বাইরে একটি করে কবর রয়েছে। এই কবরের পুজোই সর্বদা করা হয়। এমনকী গ্রামের বাসিন্দাদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ভূতের পুজো না করলে যে কোনও শুভ কাজই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
advertisement
আরও পড়ুন:
এই গ্রামের এক বাসিন্দা প্রকাশ সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, “এখানে তিনশোরও বেশি বাড়ি রয়েছে। আর প্রতিটি বাড়ির বাইরে একটি করে কবর রয়েছে। এগুলো আসলে বাড়ির পূর্বপুরুষদেরই কবর। যাঁদেরকে ভূত নামে অভিহিত করা হয়। আর গ্রামের নামও তাই রাখা হয়েছে ভূত। আসলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের গ্রামবাসীরা ঈশ্বর, প্রভু অথবা দেবতাকে ভূত বলা হয়। আর আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর বলেই মানি। এই কারণে পূর্বপুরুষদের কবরকেই আমরা ঈশ্বর ভেবে পূজা করি।”
শুভ কাজের আগে ভূতের পূজা:
প্রকাশের ব্যাখ্যা, “বছরে যে শুভ কাজই করা হোক না কেন, তা বাচ্চাদের মুণ্ডন হোক কিংবা কারও জন্মদিন বা কর্মা ও সরহুলের মতো পরব হোক, বাড়িতে ছোটখাটো পুজো থাকলেও প্রতিটি শুভ কাজের আগে ভূতের পুজো করা হয়। কোনও শুভ কাজ শুরু করার আগে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ নিতে ভুলি না। কথিত আছে যে, এটি করলে পুরো গ্রাম এবং বাড়িতে পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ অটুট থাকে, যা সুখ ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।”
আরও পড়ুন:
কবরে বিস্তারিত লেখা আছে:
প্রকাশ আরও জানান, “প্রাচীনকাল থেকেই এই প্রথা চলে আসছে। আমাদের পিতামহের আগের প্রজন্ম থেকেই গ্রামবাসীরা এই ঐতিহ্য অনুসরণ করে আসছেন। যখনই কেউ মারা যান, তখন আমরা আমাদের বাড়ির বাইরে তাঁর নামে কবর তৈরি করি। ওই কবরে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রয়েছে। যেমন – তিনি কোন দিনে মৃত্যুবরণ করেছেন, কে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন, ভোজে কত জন এসেছিলেন, ভোজের খরচ কারা বহন করছেন এবং কোন রোগে তিনি মারা গিয়েছেন, আর কত বছর তিনি বেঁচে ছিলেন ইত্যাদি।”
পূর্বপুরুষদের স্মৃতি:
প্রকাশের মতে, “পূর্বপুরুষদের স্মৃতিকে তাজা রাখার জন্য এবং তাঁদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার জন্যই মূলত এটা করা হয়। এভাবে পূর্বপুরুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ঘরে ঢোকার আগে আমরা প্রণাম করে তাঁদের আশীর্বাদ গ্রহণ করি।”