একদিকে আন্তর্জাতিক মহলে একঘরে হওয়ার আশঙ্কা। অন্যদিকে ভারতের প্রতিনিয়ত কূটনৈতিক চাপ। সবকিছু উপেক্ষা করেই বেপরোয়া পাকিস্তান। উরি-হামলার প্রেক্ষিতে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, সন্ত্রাসবাদকে লালন-পালনের অভিযোগই মানতে নারাজ ইসলামাবাদ। উলটে উরির হামলাকে কাশ্মীরের অত্যাচারের ফল বলেই দাবি পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের।
উরির ঘটনায় ‘কাজির বিচার’! ফের উরি হামলা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ৷ শনিবার উরি প্রসঙ্গে শরিফ জানান, ‘কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতের নৃশংসতার কারণেই ঘটেছে উরির ঘটনা ৷’ পাশপাশি কোনও প্রমান ছাড়াই পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে ভারত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি ৷
advertisement
এদিন শরিফ জানান, ‘গত দু’ মাস ধরে কাশ্মীরের মানুষের উপর নৃশংস অত্যাচার চালানো হয়েছে ৷ যারা মারা গিয়েছেন, বা যারা অন্ধ হয়ে গিয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা রাগে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য উরিতে হামলা চালাতেই পারে ৷’ নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশন শেষে ফেরার পথে লন্ডনে এই মন্তব্য করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন কোনও সঠিক তথ্যপ্রমান ছাড়া এই ভাবে পাকিস্তানকে উরি হামলার জন্য দোষী করা ভারতের তরফে অত্যন্ত দায়িত্বহীনের কাজ ৷
তিনি প্রশ্ন করেন উরি হামলার কয়েক ঘণ্টা পর কোনও তথ্যপ্রমান ছাড়াই কী ভাবে ভারত নিশ্চিত হয়ে যায় যে উরিতে হামলা পাকিস্তান করেছে ?
তিনি আরও বলেন কাশ্মীরে ভারতের ‘অত্যাচারের’ কথা সারা বিশ্ব জানে ৷ গত কয়েক মাস ধরে সেখানে প্রায় ১০৮জন এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন, অন্ধ হয়ে গেছেন দেড়শোর ওপর মানুষ, আহত হয়েছেন বহু ৷ শরিফ জানান, পাকিস্তানকে দোশ দেওয়ার আগে ভারতের উচিত কাশ্মীরে নিজেদের নীতি আরও একবার খতিয়ে দেখা ৷
গত রবিবারের উরি সন্ত্রাসের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে নতুন করে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা ৷
এর আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখার সময় হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি বুরহান ওয়ানিকে যুব নেতা হিসেবে বর্ণনা দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ৷ তিনি বলেন বর্তমানে কাশ্মীরের ‘জনপ্রিয় ও শান্তিপূর্ণ স্বাধীনতা আন্দোলনের মুখ’ হিসেবে উঠে এসেছে সে। শনিবার উরি নিয়ে ফের মন্তব্য করায় আরও একবার বিতর্ক উস্কে দিলেন শরিফ ৷
পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রের তকমা দিতে বিল পেশ হয়েছে মার্কিন পার্লামেন্টে। বালুচিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন-ও সন্ত্রাসপ্রশ্নে একহাত নিয়েছেন পাকিস্তানকে। আন্তর্জাতিক মহলে একঘরে হওয়ার আশঙ্কা তো রয়েছেই। তারই সঙ্গে রয়েছে ভারতের প্রতিনিয়ত কূটনৈতিক চাপ। এতকিছুর পরও অবশ্য সন্ত্রাসকে মদত দেওয়ার প্রশ্নে অবিচল ইসলামাবাদ। কিছুটা বেপরোয়াও। তাই উরি হামলার পরও অস্বীকারের তত্ত্বে অনড় পাকিস্তান। উলটে উরির হামলাকে কাশ্মীরের অত্যাচারের ফল বলেই দাবি করেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
কূটনৈতিক মহলের দাবি, সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের ভূমিকা আড়াল করতেই কাশ্মীরকে বারবার হাতিয়ার করছেন শরিফ। অন্যদিকে পাক সংবাদমাধ্যমগুলিতেও প্রত্যাশিতভাবে দেশপ্রেমের হাওয়া বইছে। সেদেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলি উরির হামলাকে ভারতের ষড়যন্ত্র বলেই উল্লেখ করছে।