শনিবার সেমিনারে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ”রাজ্যে আয়োজিত এই ধরনের সেমিনারে অংশ নিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সকলেই জানি যে মাদকের অপব্যবহার এবং এর হুমকি শুধুমাত্র এদেশেই নয় সারা বিশ্বে এখন অন্যতম সামাজিক ব্যাধি ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে মাদক, এর ব্যতিক্রম নয় ত্রিপুরাও। এই সমস্যাটি ত্রিপুরার জন্য বিশেষ ভাবে অত্যন্ত উদ্বেগজনক কারণ রাজ্যের তিন দিকে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। এই সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দিকে আন্তর্জাতিক সীমান্তকে তাদের নিরাপদ করিডোর হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছে। নিষিদ্ধ মাদক সমাজের জন্য উদ্বেগের, কারণ এটি ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংস করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও অন্যতম বড় এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে।”
advertisement
উত্তেজনা কিংবা কৌতূহলের বশে তরুণ প্রজন্ম সহজেই মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে ও নিয়মিত মাদক সেবনে অভ্যস্ত হচ্ছে। নেশা সেবনের ঝুঁকি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিন্থেটিক ড্রাগসের ব্যবহার মারণ ব্যাধি এইচআইভি/এইডস-এর ঝুঁকি বাড়ায়। যা নিষিদ্ধ মাদকের অপব্যবহারে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মাদক ব্যবসা সমাজের জন্য যেমন বিপজ্জনক তেমনি দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি। এই বেআইনি কার্যকলাপ সন্ত্রাসবাদী এবং দেশের শত্রুদের উপার্জনের অন্যতম উৎস। এই উৎস থেকে সংগৃহীত কালো টাকা সন্ত্রাসবাদীরা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ও আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করে থাকে।
সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা বলেন, ২০১৮ সালে রাজ্যের ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে সরকার “নেশা মুক্ত ত্রিপুরা” গঠনের ডাক দেয় এবং মাদক পাচারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। এনসিবি’র (নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো) তথ্য মতে, মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করা ও ধ্বংস করার ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। ২০২২ এর জুন থেকে ২০২৩ এর জুন পর্যন্ত রাজ্যে এনডিপিএস মামলায় প্রায় ১৫০৯টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। ১১৪৩টি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। ২১৩১জনকে এনডিপিএস মামলার অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৩৩১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ধরা পড়ার পরিমাণ যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। অবৈধ বাংলাদেশী নাগরিক এবং রোহিঙ্গাদের আটক করতে ত্রিপুরা পুলিশ, বিএসএফ এবং জিআরপি ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিক এবং রোহিঙ্গারা ত্রিপুরা হয়ে অন্য রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার নেপথ্যে মানব পাচারের যোগসূত্র আরও ভালো ভাবে খুঁজে পেতে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। যদিও রাজ্যে মানব পাচারের সমস্যা এখনো তেমন উদ্বেগজনক নয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এবং পাচার বাণিজ্য মোকাবিলায় বিচার বিভাগেরও একটি খুবই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
আরও পড়ুন: রাতভর নজরে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মূল সমস্যা কী? এতটা চিন্তারই বা বিষয় কেন?
এনডিপিএস আইনের অধীনে হাজার হাজার মামলা নথিভুক্ত হয়েছে এবং তদন্তও করা হচ্ছে। কিন্তু অভিযুক্তদের জামিন পাওয়ার বিষয়ে কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া, দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত বিচার বিভাগের ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ রয়েছে। এসকল ক্ষেত্রে অপরাধীদের সাজার হার আরো বাড়াতে হবে। অন্যথায় শিকড় থেকে সমস্যা নির্মূল করা সম্ভব হবে না। তাই বিচার বিভাগকে এনডিপিএস আইনের কঠোর বিধানের কথা মাথায় রেখে জামিনের বিষয়ে আরো কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী এদিন। যাতে সমাজ ও রাজ্যকে মাদক মুক্ত করা সম্ভব হয়।
আরও পড়ুন: নশিপুর রেলব্রিজ চালু ডিসেম্বরেই? বাংলার লাখ-লাখ মানুষের ট্রেনে যাতায়াতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে
মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি এই জাতীয় স্তরের সেমিনারে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ ঘোষ, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কারোল, ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অপরেশ কুমার সিং, সিকিম হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার, ত্রিপুরা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিন্দম লোধ, বিচারপতি টি অমর নাথ গৌড়, এডভোকেট জেনারেল সিদ্ধার্থ শংকর দে সহ বিচার বিভাগের শীর্ষ পদাধিকারা।