তৃণমূল সাংসদরা কী ভাবে লখিমপুর পৌঁছলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাহুল গান্ধি (Rahul Gandhi)৷ কংগ্রেস নেতার অভিযোগের জবাব দিয়ে তৃণমূল সাংসদরা জানিয়ে দিলেন, অনুমতি নয়, নিজেদের চেষ্টাতেই লখিমপুর পৌঁছেছেন তাঁরা (TMC replies to Congress allegations on Lakhimpur visit)৷
আরও পড়ুন: পুলিশের সঙ্গে বচসা, নাটক! নিজের শর্তেই লখিমপুরের পথে রাহুল গান্ধি
advertisement
রাহুল গান্ধির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কংগ্রেসের একটি দল লখিমপুর খেরি যাওয়ার অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছিল উত্তর প্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে। প্রথমে অনুমতি দেয়নি উত্তরপ্রদেশ সরকার। আর তার পরেই সাংবাদিক সম্মেলন করে ক্ষোভ উগরে দেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা এবং ভীম আর্মির সদস্যরা যদি লখিমপুর খেরি যেতে পারেন তাহলে কংগ্রেস কী দোষ করল !
এর পরই শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোর। কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপাল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ-সহ রাজ্যের উচ্চপদস্থ আমলাদের চিঠি দিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের নাম-সহ নালিশ করেন। যদিও তারপরেই যোগী আদিত্যনাথ এর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাহুল সহ কংগ্রেসের ৫ প্রতিনিধিকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুমতি দেয় রাজ্য সরকার।
এর পর মুখ খোলেন সদ্য লখিমপুর ফেরত তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং সুস্মিতা দেব।কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, "আমরা কোনও অনুমতি নিয়ে ঘটনাস্থলে যাইনি। আর্ত ও পীড়িত মানুষের পাশে থাকার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয় না। যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেনেন, তাঁর রাজনীতি জানেন তাঁরা এ কথা বলবেন না। যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছেন। রাহুল গান্ধির উচিত আরেকটু রাজনৈতিক পরিপক্কতা নিয়ে কথা বলা।"
একই সুরে বলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সংসদ সুস্মিতা দেব। তাঁর কথায়, "কংগ্রেসের একটি চিঠি দেখলাম। যাতে লেখা হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের কেন অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কংগ্রেসকে কেন অনুমতি দেওয়া হয়নি? এই তথ্যটা ভুল। আমি কংগ্রেসকে একটু শুধরে দিতে চাইবো, তৃণমূল কংগ্রেস অনুমতি নিয়ে লখিমপুর খেরি যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমরা দলের ৫ জন সাংসদ দু'ভাগে ভাগ হয়ে লখিমপুর খেরি গিয়েছিলাম। তিন জন সাংসদ গিয়েছিলেন দিল্লি থেকে সড়ক পথে। আমি এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদার কলকাতা থেকে লখনউ বিমানবন্দর হয়ে গিয়েছিলাম। কংগ্রেস ভুল বুঝেছে ,আমরা অনুমতি চাইনি আর অনুমতি পাইওনি। বাংলায় আমাদের সরকার থাকলেও কেন্দ্রে আমাদের সরকার নেই। আমরা বিরোধী দল। বিরোধীদের রাজনৈতিক বিরোধিতা করার অধিকার রয়েছে।"
একদিকে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় স্তরে ও বিজেপি এবং সমভাবাপন্ন দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে এগুলোর কথা বলছেন। তখন ২০২৪- এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের জোটে প্রভাব পড়বে ?
তৃণমূল সাংসদ বলছেন, একদমই প্রভাব পড়বে না। কারণ দুটো বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক জোট অনেক বড় বিষয়। বৃহত্তর প্রেক্ষিতে তার সিদ্ধান্ত হয়। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতা করেছে। তার পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোনিয়া গান্ধি, শরদ পাওয়ারের মতো নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এটা বৃহত্তর ছবি। অতএব দুটো বিষয়কে এক করে দেখা উচিত নয়।
কোন কৌশলে লখিমপুরে পৌঁছেছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা ?
নিউজ এইট্টিন বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সুস্মিতা দেব এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদার জানালেন, দলের নেতাদের কড়া নির্দেশ ছিল, বিমানবন্দরে কোন সংবর্ধনার আয়োজন যেন না হয়। শান্তিপূর্ণভাবে চুপচাপ ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়েছি। সুস্মিতার কথায়, "হাথরসের ঘটনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। উত্তর প্রদেশ সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না তারা যা কিছু করতে পারে তাই আগাম সতর্কতা ছিলাম আমরা। যাতায়াতের পথে কোথাও আমরা সাংসদ পরিচয় দিইনি। পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হলে আমরা আধার কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়েছি। অতএব সাংসদ হিসেবে বা কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা চিহ্নিত হইনি।"
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিরোধী শিবিরের থেকে সরকারের বিরোধিতা করতে হলে এটাই রাজনৈতিক কৌশল হওয়া উচিত। যা কংগ্রেস করতে পারেনি। এদিন সুস্মিতা বলেন, "আমরা খুশি তার কারণ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি যতক্ষণ পৌঁছয়নি ততক্ষণ কৃষকদের বক্তব্য সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রকাশ পায়নি। কৃষকদেরকে এখনও ক্ষোভ রয়েছে তা প্রকাশ পায় তৃণমূল কংগ্রেস যাওয়ার পরে।"