গত ২৮ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রেডিও-তে তাঁর ‘মন কি বাত’ (Mann ki Baat) অনুষ্ঠানে 'বেদু' (Bedu) ফলের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যা পিথোরাগড়ে (Pithoragarh) পাওয়া যায়। হিমালয় অঞ্চলের এই ফল থেকে জ্যাম এবং চাটনি তৈরি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য তিনি উত্তরাখণ্ডের প্রশাসনের প্রশংসা করেছিলেন। 'বেদু' নামটি হয়তো অনেকের কাছেই তেমন পরিচিত নয়। তবে এটি 'ওয়াইল্ড হিমালয়ান ফিগ' (Wild Himalayan Fig) নামে বেশি পরিচিত। 'বেদু' শব্দটি স্থানীয় ভাবে ব্যবহৃত হয়। জনপ্রিয় কুমাওনি লোকগীতিতে এর উল্লেখ পাওয়া যায়— 'বেদু পাকো বর মাসা' অর্থাৎ সারা বছর, বারো মাসই ডুমুর পাকে।
advertisement
আরও পড়ুন: গ্রেফতার অনুব্রত, স্বস্তির শ্বাস ফেলে ফের বীরভূমে জমি আন্দোলন! জোট বাঁধছে কৃষকরা
মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘উত্তরাখণ্ডে অনেক ধরনের ওষধি গাছপালা পাওয়া যায়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তার মধ্যে একটি ফল বেদু। এটি হিমালয়ান ডুমুর নামেও পরিচিত। এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ ও ভিটামিন পাওয়া যায়। মানুষ এটি শুধুমাত্র ফলের আকারেই খায় না, এটি অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃতও হয়। এই ফলের এত গুণাবলির কারণে এখন বেদুর রস, জ্যাম, জেলি, আচার এবং এমনকী ফলটি শুকিয়েও বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন, অপুষ্টি দূর করতে এবং সামাজিক সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ‘উৎসবের পাশাপাশি, সেপ্টেম্বর মাসটি পুষ্টি সম্পর্কিত একটি বড় প্রচারণার জন্যও উৎসর্গ করছি। আসুন আমরা ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে 'পোষণ মাহ' বা পুষ্টি মাস উদযাপন করি।’
আরও পড়ুন: বচ্চন পরিবারের সঙ্গে ঋতুপর্ণ ঘোষের ছিল হৃদয়স্পর্শী সম্পর্ক! রইল যোগসূত্র...
হিমালয়ান ডুমুরের নানা রকম উপকারিতা রয়েছে। সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক সে সব উপকারিতার কথা—
স্বাস্থ্য সুবিধা
উত্তরাখণ্ডের বনাঞ্চলেই সাধারণত পাওয়া এই ফলটি পাওয়া যায়। এটি স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি, ফুসফুস ও মূত্রনালীর রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্ত শোধনের মতো নানা ধরনের কাজ করতে পারে।
এ ছাড়া এই ফলের রয়েছে প্রদাহ উপশম, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং মূত্রাশয় নিরাময়েও ওষধি গুণও। শুধু তাই নয়, বেদু নামক এই ফলটির রস আঁচিলের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
পিথোরাগড়ের জেলা শাসক (DM) আশিস চৌহান (Ashish Chouhan) সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বেদু এক ধরনের ডুমুর যার মধ্যে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা বহন করে। এটি উত্তরাখণ্ডের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। আমরা এই পণ্যগুলিকে বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করার জন্য চালু করেছি যা স্থানীয় মানুষের মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। এটি ভারতের জনগণের জন্য রাজ্যের প্রাকৃতিক প্রাচুর্য, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের একটি অংশও পূরণ করবে।’
জানা গিয়েছে, একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ এক মরসুমে প্রায় ২৫ কেজি পর্যন্ত ডুমুর উৎপাদন করতে পারে। পাকা ডুমুর সাধারণত কালো ও বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। এ গুলি ফল হিসাবে খাওয়া হয়। তবে কাঁচা ডুমুরগুলি চাটনি, আচার হিসেবে তৈরি করে ব্যবহার করা হয়।
প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমকারী—
ব্যথা সারাতে আমরা যে সব ওষুধ ব্যবহার করে থাকি, তা যথেষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে সেই সব ওষুধের নিরাপদ বিকল্প হয়ে উঠতে পারে এই বেদু। গবেষণাগারে ইঁদুরের উপর প্রয়োগ করে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। তাতেই দেখা গিয়েছে বন্য হিমালয় ডুমুর অ্যাসপিরিন (Aspirin) এবং ডাইক্লোফেনাকের (Diclofenac) মতো কৃত্রিম ব্যথা উপশমকারীর নিরাপদ বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই ফলটির বিজ্ঞানসম্মত নাম 'ফিকাস পালমাটা' (Ficus Palmata)। বন্য হিমালয়ের ডুমুরে দু’টি প্রধান উপাদান রয়েছে সোরালেন (Psoralen) এবং রুটিন (Rutin), এমনটাই জানিয়েছে পঞ্জাবের ‘লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটি’-র (Lovely Professional University) গবেষক দল।
তাঁদের গবেষণায় উপসংহারে বলা হয়েছে যে, বন্য হিমালয় ডুমুরের সম্ভাব্য ব্যথানাশক প্রভাব রয়েছে। সাধারণ ভাবে বিভিন্ন মাত্রায় তা প্রয়োগ করতে হতে পারে। প্রতি কিলোগ্রামে ৪০০ মিলিগ্রামের ডোজ তৈরি করা যেতে পারে বলে তাঁদের দাবি।
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক দেবেশ তিওয়ারি (Devesh Tiwari) বলেছেন, ‘বন্য হিমালয়ান ডুমুর ওরফে বেদু হল অ্যাসপিরিন এবং ডাইক্লোফেনাকের মতো সিন্থেটিক ব্যথা উপশমকারীর জন্য একটি চমৎকার এবং নিরাপদ উদ্ভিদ-ভিত্তিক বিকল্প।’