২০২৫-এর বিধানসভা নির্বাচন এবার শুধুই জোট-সমীকরণ বা আসনসংখ্যার খেলা ছিল না। এটা হয়ে উঠেছিল ব্যক্তিত্বের মঞ্চ, ব্যঙ্গ-রসের লড়াই, আর খানিকটা পারিবারিক নাটক—তেজস্বী ও তেজ প্রতাপকে কেন্দ্র করে। ভোটাররা ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, কিন্তু প্রচারের রাস্তায় আসলে কে বেশি ছাপ রেখে গেল—সে প্রতিযোগিতা এখনও জ্বলজ্বল করছে।
২০০২ সালের ভোটার তালিকা দেখবেন কীভাবে? কয়েকটি সহজ ধাপেই মিলবে নিজের নাম
advertisement
কে বেশি মজার?
তেজস্বী যাদব
তেজস্বীর রসিকতা একটু মেপে-মেপে, স্মার্ট, আর রাজনৈতিক ব্যঙ্গের ঝাঁজে ভরপুর। এক উত্তপ্ত সাংবাদিক বৈঠকে তিনি হঠাৎ বলে ফেলেছিলেন—চিরাগ পাসোয়ানকে “এবার বিয়ে করে ফেলা উচিত।” ঘরের মধ্যে হাসির ঢেউ উঠেছিল।
আবার তাঁকে নিয়ে ঠাট্টার ঢেউও উঠেছে। বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গদের সঙ্গে নিজের তুলনা টেনে ফেলায় সোশ্যাল মিডিয়া তাঁকে ভালোই খোঁচা দিয়েছে।
তেজ প্রতাপ যাদব
তেজ প্রতাপের হাস্যরস অনেকটাই কাঁচা, রাস্তার ধুলোবালির গন্ধে মেশানো—যেমন তিনি হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে রাস্তার দোকানে নিজে জিলিপি বানিয়ে ফেললেন, তার পর নিজের হাতেই খেলেন। এবার নির্বাচনে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন—নিজের দলের প্রার্থীদের “এন্ট্রি স্টাইল”ই হয়ে গেল ভাইরাল বিষয়। কেউ এলেন মনোনয়নে মহিষে চড়ে, আর একজন এলেন হ্যান্ডকাফ পরে। সেটা দেখলে মনে হয়, তিনি রাজনীতি নয়—একটা বাস্তবতা-শো চালাচ্ছেন!
জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে?
তেজস্বী যাদব
সমস্ত জরিপই এক সুরে বলেছে—বিহারের বিরোধী শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী পদে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম তেজস্বী। NDTV-তে উদ্ধৃত People’s Pulse জরিপ বলছে—তিনি সবচেয়ে পছন্দের মুখ। টাইমস অফ ইন্ডিয়া-র এক মতামত সমীক্ষায় দেখা যায়—২০২৫ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তেজস্বী পেয়েছেন ৩৬.৫ শতাংশ সমর্থন, অন্যদের থেকে বেশ এগিয়ে। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নিজের দৃঢ় ঘাঁটি, বৈশালীর রাঘবপুর থেকে—যেখানে যাদব পরিবারের প্রভাব বহু পুরোনো।
তেজস্বী, তেজ প্রতাপের বাবা ইন্টারনেট যুগের আগেই ‘ভাইরাল’! এবার দেখুন লালুর ছেলেদের কীর্তি
চূড়ান্ত ফলাফলে কে এগোবেন তা এখনই বলা যায় না, কিন্তু প্রচারের রাস্তায় কারা বেশি আলো কাড়লেন—এই অনানুষ্ঠানিক লড়াইয়ে দু’ভাই-ই নিজেদের মতো করে ইতিহাসে নাম খোদাই করে দিয়েছেন। একজন হিসেবি, ছন্দময় ব্যঙ্গ নিয়ে; আর একজন সম্পূর্ণ খাঁটি গ্রাম্য আঙ্গিকে—যেমন লালু করেছিলেন বহু বছর আগে।
প্রসঙ্গত, লালুপ্রসাদের ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ জটিল। বিশেষ করে বড় ছেলে, তেজ প্রতাপ যাদব-এর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সাম্প্রতিককালে উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। যেখানে তেজ প্রতাপকে আরজেডি (RJD) দল থেকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। লালু প্রসাদের বড় ছেলে তেজ প্রতাপ,তাঁর বাবার দলের সঙ্গে তীব্র বিরোধে জড়িয়ে পড়েন, যার ফলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। লালু প্রসাদের ছেলে তেজস্বী যাদব, রাজনীতিতে তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন এবং বর্তমানে আরজেডি প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন।
বিহার বিধানসভা নির্বাচনে দুই দফায় মোট ২৪৩টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোটে জয়ের ম্যাজিক ফিগার ১২২। বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোটের ফলাফলের দিকে নজর রয়েছে গোটা দেশের। আজ, ১৪ নভেম্বর, শুক্রবার, ভোট গণনা এবং দুপুরের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে উঠবে কার দখলে পটনার মসনদ।
ইতিমধ্যে ভোট গণনার বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছেন। রাজ্যের ৩৮টি জেলায় মোট ৪৬টি ভোট গণনা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১২২ জন রিটার্নিং অফিসার ও অবসার্ভারের তরফ থেকে এই প্রথমবার বিহারের কোনও বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি ওঠেনি।
ব্যবধান ক্রমশ বাড়াচ্ছে এনডিএ। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ১৮২ আসনে এগিয়ে রয়েছে এনডিএ। বিরোধীদের ‘মহাগঠবন্ধন’-এর এগিয়ে থাকা আসনগুলি হাতছাড়া হতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিরোধী জোট এগিয়ে রয়েছে ৫৮টি আসনে।
ভোটগণনায় বিরোধীদের পিছনে ফেলে ক্রমশ ব্যবধান বৃদ্ধি করছে শাসকজোট এনডিএ। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ১৬৩ আসনে এগিয়ে রয়েছে এনডিএ। বিরোধীদের ‘মহাগঠবন্ধন’ এগিয়ে আছে ৭৬টি আসনে। বিজেপির বিহার নেতৃত্ব ইতিমধ্যে ধরে নিয়েছেন, তাঁরা বড় জয়ের পথে এগোচ্ছেন। প্রাথমিক আভাস দেখেই পটনা-সহ বিহারের বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তায় রাস্তায় জয়োল্লাস শুরু করে দিয়েছেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা।
