এবার বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ৭৭টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। সেই সংখ্যা কমতে কমতে এখন ৭১ ঠেকেছে। তার ওপর তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) দাবি করেছেন বিজেপির আরও ২৫ জন বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। তাদের পদত্যাগ করিয়ে পুনরায় জিতিয়ে আনার ক্ষমতা রাখে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। দিল্লিতে টানা নয় ঘন্টা ধরে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের আধিকারিকদের জেরার পরে ইডি দপ্তরের সামনে দাঁড়িয়ে হুংকার ছেড়েছেন অভিষেক। বলেছেন, "২০২৪-এ বিজেপিকে কেন্দ্রের ক্ষমতা থেকে কুপোকাত করবে তৃণমূল।"এর ঠিক একদিন পরে দিল্লি পৌঁছন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা রাজ্যে বিজেপির অন্যতম মুখ শুভেন্দু অধিকারী। সূত্রের খবর, রাজ্য বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা হিসেবে শুভেন্দুর ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলীয় বিধায়কদের একে একে তৃণমূলে যাওয়ার কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে গোপনে শুভেন্দু অধিকারীর দাম্ভিক আচরণকে দায়ী করেছেন অনেক বিজেপি নেতা। এই পরিস্থিতিতে দলে ক্রমাগত ভাঙ্গন নিয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে চেয়ে জরুরি তলব করা হয়েছিল।
advertisement
সেই মতো মঙ্গলবার রাতে দিল্লি পৌঁছন। শুভেন্দু বুধবার রাতে কলকাতায় ফেরার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কিন্তু, বুধবার সকাল থেকে শত চেষ্টা করেও অমিত শাহর সাক্ষাৎ পেলেন না শুভেন্দু। ঘনিষ্ঠ মহলে শুভেন্দু জানিয়েছেন এদিন সকাল থেকে অমৃতসর দপ্তরে বারবার যোগাযোগ করেছেন তিনি তাকে আশ্বাস দিলেও সাক্ষাতের সময় দেওয়া হয়নি। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠক নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
সামনেই উত্তরপ্রদেশ সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর উত্তরপ্রদেশ সহ অন্য রাজ্যগুলির কোনও ভাবেই হাত ছাড়া করতে নারাজ বিজেপি। এমতবস্থায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কে সময় দিতে পারেননি অমিত শাহ।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেখা না পেয়ে 'দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো'র মতো শুভেন্দু এদিন কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ির সঙ্গে দেখা করে নন্দীগ্রাম ও হলদিয়ার মধ্যে যোগাযোগকারী সেতু নির্মাণ এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ দ্রুত সম্পন্ন করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও তিনি দেখা করেছেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়নমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীর সঙ্গেও। দেখা করেছেন দলের নেতা অনির্বাণ গাঙ্গুলীর সঙ্গেও। এঁদের সঙ্গে দেখা করার পর নিজেই ছবি পোস্ট করেছেন ট্যুইটারে।
যদিও এদিনের এই ঘটনার পর রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শুভেন্দুকে এড়িয়ে চলতে চাইছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই কারণেই তাঁকে দিল্লিতে তলব করে দেখা না করে বসিয়ে রাখলেন মোদি সরকারের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শুভেন্দুর উপর দল যে ক্রমশ আস্থা হারাচ্ছে, সেদিনের ঘটনায় তারই ইঙ্গিত মিলেছে। যদিও শুভেন্দু ঘনিষ্ঠরা বলছেন, 'তেমন কিছু নয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যস্ত রয়েছেন। তাই শুভেন্দু অধিকারীকে আরও একদিন দিল্লিতে থাকতে বলেছেন। অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করেই কলকাতায় ফিরবেন শুভেন্দু।' সে যাই হোক তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক তথা দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ এদিন বলেছেন, "বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছেন। সেই কারণেই তাঁকে দিল্লিতে ডেকে ধমক দিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা।"