সাধারণত বাবার পদবীর উপরে ভিত্তি করেই সন্তানের জাতিগত পরিচয় নির্ধারণ করাটাই রীতি৷ সেই রীতিকে চ্যালেঞ্জ করেই জাতিগত শংসাপত্র আদায়ের জন্য একাধিক আবেদন জমা পড়েছে শীর্ষ আদালতে৷
‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই নাবালিকার মা এসসি তালিকাভুক্ত হলেও বাবা সাধারণ শ্রেণির মধ্যেই পড়েন৷ এর আগে মাদ্রাজ হাইকোর্টও মায়ের পদবীর ভিত্তিতে ওই নাবালিকাকে এসসি সার্টিফিকেট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল যাতে সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে৷
advertisement
মাদ্রাজ হাইকোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই শীর্ষ আদালতে মামলা হয়৷ সেই মামলায় নির্দেশ দিতে গিয়েই মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়কেই মান্যতা দেন প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি৷
রায় দিতে গিয়ে দুই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন এত বদল হচ্ছে, তাহলে কেন জাতিগত শংসাপত্রও মায়ের পদবীর ভিত্তিতে দেওয়া যাবে না?’ একই সঙ্গে অবশ্য শীর্ষ আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে, এই ধরনের ক্ষেত্রে আইনি প্রশ্নকেও অস্বীকার করা যায় না৷
এই রায়কে ব্যাখ্যা করতে গেলে বলাই যায় এবার থেকে এসসি তালিকাভুক্ত মহিলা এবং সাধারণ শ্রেণির পুরুষের বিয়ে হলে তাঁদের সন্তানরা মায়ের পদবীর ভিত্তিতেই জাতিগত শংসাপত্রের জন্য আবেদন জানাতে পারেন৷
নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এই মামলাটির ক্ষেত্রে পুদুচেরির বাসিন্দা আবেদনকারী মহিলা তাঁর দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জন্য নিজের বাপের বাড়ির পদবীর ভিত্তিতে এসসি সার্টিফিকেটের আবেদন জানিয়েছিলেন৷ ওই মহিলা জানান, তাঁর বাবা-মা এবং পূর্বসূরীরা আদি দ্রাবিড় জাতির সদস্য৷ যা এসসি তালিকাভুক্ত৷ তাঁর স্বামী সাধারণ শ্রেণির হলেও বিয়ের পর তিনিও নিজের শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন৷
এই মামলা চলাকালীন ১৯৬৪ সালের ৫ মার্চ এবং ২০০২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রম ন্ত্রকের দুটি গাইডলাইনের কথাও উঠে আসে৷ যেখানে বলা হয়েছিল, কারও জাতিগত পরিচয় নির্ণয় হবে তাঁর বাবার জাত এবং তিনি কোথায় বসবাস করছেন, তার ভিত্তিতে৷
অতীতে একাধিক মামলায় সুপ্রিম কোর্টও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে একটি শিশুর জাতিগত পরিচয় নির্ধারিত হবে তাঁর বাবার জাতের ভিত্তিতেই৷ সুপ্রিম কোর্ট আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কোনও শিশু সাধারণ শ্রেণির প্রতিনিধি হয়েও যদি এমন পরিবেশে বড় হয় যেখানে সে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের শিশুদের মতো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে, তাহলেও তাকেও সেই সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে গণ্য করা যেতেই পারে৷
চলতি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নাবালিকার স্বার্থের কথা মাথায় রেখে অবিলম্বে তাকে এসসি শংসাপত্র দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে৷ কিন্তু আইনি দিক বিবেচনা করার পরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত৷
