এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে এ দিন সুপ্রিম কোর্ট স্বীকার করে নিয়েছে, স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ইদানিং মহিলাদের মধ্যে গার্হস্থ্য হিংসা বিরোধী আইনের অপব্যবহার করে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের হেনস্থার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে৷ মঙ্গলবার অন্য একটি মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি বি ভি নাগার্থনা এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং এই মন্তব্য করেন৷ তাঁরা জানান, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ (এ) ধারায় স্ত্রীর উপরে স্বামী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুরতার অভিযোগ উঠলে শাস্তি দেওয়ার যে সংস্থান রয়েছে, তার অপব্যবহার ঘটছে বলে মন্তব্য করেন দুই বিচারপতি৷
advertisement
আরও পড়ুন: ‘মহিলাদের পক্ষেই সব আইন!’ আক্ষেপ মৃত ইঞ্জিনিয়রের পরিবারের, বেঙ্গালুরুর ঘটনায় ক্ষোভে ফুটছে দেশ
দুই বিচারপতিই একমত হয়ে বলেন, যে আইনের উদ্দেশ্য ছিল গার্হস্থ্য হিংসা এবং হয়রানি থেকে মহিলাদের রক্ষা করা, অযৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য সেই আইনেরি অপব্যবহার করছেন কিছু মহিলা৷
তেলঙ্গানার একটি দাম্পত্য বিবাদ সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি করতে গিয়েই বেঙ্গালুরুর ওই ইঞ্জিনিয়ারের আত্মহত্যার ঘটনার কথা টেনে আনেন দুই বিচারপতি৷ তেলঙ্গানার ওই মামলাটির ক্ষেত্রেও স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে পণের দাবিতে অত্যাচারের অভিযোগ এনেছিলেন এক মহিলা৷ ডিভোর্সও চেয়েছিলেন তিনি৷ এই মামলাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রথমে তেলঙ্গানা হাইকোর্টে আবেদন করেন মহিলার স্বামী৷ কিন্তু তেলঙ্গানা হাইকোর্ট সেই আর্জি নাকচ করে দেয়৷ এর পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় মামলাকারী মহিলার স্বামী৷ সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য মহিলার অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির পক্ষেই রায় দিয়েছে৷
এই মামলা রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি জানিয়ে দেন, ব্যক্তিগত আক্রোশ চরিতার্থ করার জন্যই আইনের অপব্যবহার করে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই মহিলা৷
স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সি একজন ইঞ্জিনিয়ার৷ উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা অতুল সুভাষ নামে ওই যুবক বেঙ্গালুরুতে নিজের বাড়িতেই আত্মঘাতী হন৷ মৃত্যুর আগে ২৪ পাতার সুইসাইড নোট লিখে গিয়েছেন তিনি৷ সেই চিঠিতেই স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন অতুল৷
আক্ষেপের সঙ্গে অতুল সেই সুইসাইড নোটেই লিখেছেন, ‘এই মুহূর্তে আইনকে ঢাল করেই ভারতে পুরুষদের হত্যালীলা চলছে৷’ বেসরকারি সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত অতুলের বেঙ্গালুরুর বাড়ি থেকেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়৷ গলায় ফাঁস দেওয়ার আগে গলায় একটি প্ল্যাকার্ডও ঝুলিয়ে দেন অতুল৷ তাতে লেখা ছিল, ‘বিচার পেলাম না৷’
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, অতুলের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর দাম্পত্য কলহ চলছিল৷ উত্তর প্রদেশে অতুলের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী একাধিক অভিযোগ এনে মামলাও করেছিলেন৷ মৃত্যুর আগে একাধিক ব্যক্তিকে ই মেল করে নিজের সুইসাইড নোট পাঠান অতুল৷ পাশাপাশি, হোয়াটসঅ্যাপে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেও নিজের সুইসাইড নোট পাঠান ওই যুবক৷
মৃত্যুর আগে ওই যুবক একটি ভিডিও রেকর্ড করে বলেন, ‘আমার স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে উত্তর প্রদেশে ৯টি মামলা দায়ের করেছেন৷ তার মধ্যে ৬টি মামলা নিম্ন আদালতে চলছে, ৩টি চলছে হাইকোর্টে৷’ অতুল জানিয়েছেন, এর মধ্যে ২০২২ সালে দায়ের করা একটি মামলায় তাঁর সঙ্গে তাঁর বাবা-মা, ভাইয়ের বিরুদ্ধে পণের জন্য অত্যাচার, খুন, অপ্রকৃতিস্থ যৌনাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়৷’ শুধু তাই নয়, উত্তর প্রদেশের জৌনপুরের যে আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচার চলছিল, সেখানকার বিচারকও মামলার নিষ্পত্তি করার বিনিময়ে ঘুষ চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করে গিয়েছেন অতুল৷
