লাইভ ল-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ধরনের যৌন হেনস্থার অভিযোগ যে বিধিবদ্ধ সময়ের মধ্যে দায়ের হওয়া উচিত, এক্ষেত্রে তা হয়নি৷ সেই যুক্তিতেই এই মামলা খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পঙ্কজ মিথল এবং বিচারপতি পি বি ভারেলের বেঞ্চ৷ যদিও দুই বিচারপতি নির্দেশ দেন, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের কথা পশ্চিমবঙ্গ আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্মলকান্তি চক্রবর্তীর জীবনপঞ্জিতে উল্লেখ করতে হবে৷ এবং সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ যাতে অমান্য না হয়, তা আজীবন নিশ্চিত করতে হবে অভিযুক্ত উপাচার্যকেই৷ উপাচার্য যে ভুল করেছেন তা যাতে সহজে স্মৃতির আড়ালে চলে না যায়, তা নিশ্চিত করতেই এই নির্দেশ দেন দুই বিচারপতি৷
advertisement
দুই বিচারপতি নির্দেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘এই মামলায় যৌন হয়রানির যে অভিযোগ উঠেছে তা ক্ষমা করে দিলেও অভিযুক্ত যে ভুল করেছেন তা যেন সারাজীবন তাঁকে অনুতপ্ত করতে থাকে৷ তাই নিজের জীবনপঞ্জি এই রায়ের কথা অভিযুক্তকে লিখতে হবে এবং এই নির্দেশ যাতে মেনে চলা হয় তা ব্যক্তিগত ভাবে অভিযুক্তকেই নিশ্চিত করতে হবে৷’
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ৷ কিন্তু তার প্রায় আট মাস বাদে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সরকারি ভাবে অভিযোগ দায়ের করেন নিগৃহীতা৷ ঘটনার এত মাস পরে অভিযোগ দায়ের হওয়ার কারণেই মামলা খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট৷
প্রাথমিক ভাবে লোকাল কমপ্লেইন্ট কমিটি (এলসিসি)-র কাছে অভিযোগ দায়ের করেন নিগৃহীতা মহিলা৷ কিন্তু নিয়ম মতো ঘটনার তিন মাসের মধ্যে অভিযোগ দায়ের হয়নি, এই যুক্তিতে অভিযোগ খারিজ করে দেয় এলসিসি৷ এমন কি, ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে ছ মাসের মধ্যেও অভিযোগ দায়ের করা যায়৷ কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই সময়সীমাও পার হয়ে গিয়েছিল৷ কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রুখতে যে আইন রয়েছে, তাতেই এই সময়সীমার উল্লেখ রয়েছে৷
অভিযোগকারিণী তাঁর অভিযোগপত্রে জানান, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন নির্মলকান্তি চক্রবর্তী৷ তার পর থেকেই তিনি তাঁকে কুপ্রস্তাব, কেরিয়ার নষ্ট করার হুমকির দিতে শুরু করেন৷ ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর একটি রিসর্টে সময় কাটাতে যাওয়ার জন্য ওই উপাচার্য চাপ দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগকারিণী দাবি করেন৷ তিনি সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই উপাচার্য পেশাগত ক্ষেত্রে তাঁর ক্ষতি করার হুঁশিয়ারি দেন বলেও অভিযোগ৷
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে অভিযোগকারিণী মহিলার পদোন্নতির কথা থাকলেও তা আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ৷ শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল তাঁর পদোন্নতিতে অনুমোদন দেয়৷
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ফের একবার ওই অভিযোগকারিণীকে নিজের অফিসে ডাকেন অভিযুক্ত উপাচার্য৷ তখনই তিনি তাঁকে রিসর্টে যাওয়ার প্রস্তাব দেন৷ যদিও সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন অভিযোগকারিণী৷ এর পরই অভিযোগকারিণীর কেরিয়ারে ক্ষতি করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন ওই উপাচার্য৷
এলসিসি-তে অভিযোগ খারিজ হওয়ার পর কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযোগকারিণী৷ ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের পরেও অভিযোগকারিণী কর্মক্ষেত্রে হুমকি এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, এই যুক্তিতে অভিযোগকে মান্যতা দেন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি৷ যদিও হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ একক বেঞ্চের এই নির্দেশকে খারিজ করে দেয়৷