নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের বিল পাশ করানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া নিয়ে বিচারবিভাগের সঙ্গে ফের সংঘাতে কেন্দ্রীয় সরকার। নরেন্দ্র মোদি সরকারের দাবি, এভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি বা বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালদের বিল নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে না বিচারবিভাগ। তাতে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে।
রাজ্য বিধানসভায় পাস হওয়া বিল নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে হবে বলে জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বিল আটকে রাখতে পারেন না বলে জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য সর্বোচ্চ তিন মাসের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশ নিয়েই এবার প্রবল আপত্তি জানাল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। তাদের দাবি, আদালতের এমন নির্দেশে দেশে ‘সাংবিধানিক বিশৃঙ্খলা’ দেখা দিতে পারে।
advertisement
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, আইনসভায় পাশ করা কোনও বিল রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি কেউই অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখতে পারেন না। ওই বিল নিয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের। সমস্যা হল, এমনিতে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতিকে এভাবে ‘নির্দেশ’ দিতে পারে না। কিন্তু সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শীর্ষ আদালত ‘সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে’ আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে বিশেষ রায় দিতেই পারে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বহু বিজেপি নেতাই সুপ্রিম কোর্টের দিকে তোপ দেগেছেন।
এবার লিখিতভাবে এই রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপত্তি জানাল কেন্দ্র। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা লিখিত হলফনামায় দাবি করলেন, সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে’ আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে বিশেষ রায় দিতেই পারে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ওই বিশেষ অনুচ্ছেদেও সংবিধান বদলানো যায় না। বা সংবিধান প্রণেতাদের উদ্দেশ্যকে ভুল প্রমাণ করা যায় না।
তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিধানসভায় পাস হওয়া বিল আটকে রাখার অভিযোগও তুলেছে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। তামিলনাড়ুর এমকে স্ট্যালিন সরকার এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়, যার প্রেক্ষিতে গত এপ্রিল মাসে রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্তগ্রহণের সময় বেঁধে দেয় বিচারপতি জেপি পর্দিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ। আদালতের এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিজেপি সাংসদ থেকে দেশের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়, যিনি একসময় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ছিলেন। আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
কেন্দ্রের হয়ে আদালতে হলফনামা জমা দিয়েছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাঁর দাবি, সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদ সুপ্রিম কোর্টকে যে কোনও বিষয়ে বিচারপ্রদানের অভূতপূর্ব অধিকার দিলেও, সংবিধান সংশোধন করতে পারে না আদালত, সংবিধান প্রণেতাদের অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। সংবিধান এর অনুমতি দেয়নি। তিনি লেখেন, “বিলে সম্মতি কার্যকরের ক্ষেত্রে কিছু সীমিত সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু তার জন্য় রাজ্যপালের উচ্চপদকে অধঃস্তনে নামিয়ে আনা যায় না। রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির দফতর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ আদর্শকে তুলে ধরে। কোনও অভিযোগ থাকলে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার সমাধান করতে হবে, বিচারবিভাগের অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নয়।” এমন ঘটলে দেশে সাংবিধানিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে বলে জানান তিনি।