আবাস যোজনার বরাদ্দ এসে পৌঁছনোর পর থেকেই রাজ্যজুড়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গৃহপ্রাপকদের তালিকা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য। আর সেই কাজ শুরু হতেই সামনে আসছে ভুরি ভুরি অভিযোগ। কোথাও চারতলা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তালিকায় নাম থাকছে তৃণমূল উপপ্রধানের স্ত্রীয়ের, কোথাও আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের কপালে জুটছে হুমকি। মাটির বাড়িতে বসবাস করলেও আবাস যোজনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বহু মানুষ। আর যাঁদের বাড়িঘর, সম্পত্তির কোনও অভাব নেই, প্রভাব খাটিয়ে তাঁরাই সব নিজেদের এবং নিজের আত্মীয় পরিজনদের নাম তুলে দিচ্ছে তালিকায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তালিকা যাচাইয়ে বেশ কয়েক দফা নিয়মবিধি বেঁধে দিয়েছে নবান্ন। হুমকির ঘটনা রুখতে পুলিশকেও কাজে লাগানোর ব্যবস্থা হয়েছে।
advertisement
এ বার এই সমস্ত অভিযোগ জানিয়েই কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে চলেছেন সুকান্ত-শুভেন্দু। এ প্রসঙ্গে শুভেন্দু এদিন বলেন, "আমরা চাই কোনও রং দেখে নয়, নিয়ম মেনে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার স্বচ্ছ তালিকা তৈরি করা হোক। এতদিন কোনও নিয়মকানুন ছাড়াই ১৭ দফা গাইডলাইন অমান্য করে মোটা টাকার বিনিময়ে তৃণমূলের লোকেরা ঠিক করে দিচ্ছিল কারা বাড়ি পাবেন। রাজ্য সরকার স্বচ্ছ তালিকা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও, সেই চেষ্টা এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন শাসকদলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা।"
আরও পড়ুন, নরেন্দ্রপুরে উদ্ধার বিবস্ত্র, বেহুঁশ তরুণী! গণধর্ষণে অভিযুক্ত হবু স্বামী, দেওর
বিরোধী দলনেতা জানান, ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পঞ্চায়েতের মাধ্যমে নয়, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা সরাসরি গরিব মানুষদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু, এরপরেও শুভেন্দুরা মনে করছেন, কোনও একটা ওয়েব পোর্টাল তৈরি করেই এই আবাস যোজনার কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।
তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী কিষান নিধি সম্মানের মতো পোর্টাল চালু করে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আবেদনের ব্যবস্থা করা হলে ভাল হয়। পোর্টালের মাধ্যমে যাঁরা আবেদন করবেন, তার নজরদারিতে থাকবেন কেন্দ্র এবং রাজ্যের প্রতিনিধিরা। সঠিক নিয়ম মেনে আবেদন করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করে যৌথ তদন্তের মাধ্যমেই যেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার স্বচ্ছ তালিকা তৈরি করা হয়। এ ব্যাপারেও আমরা দিল্লির বৈঠকে গিরিরাজ সিংয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। পাশাপাশি পুরনো তালিকা বাতিল করার দাবিও জানাব।"
আরও পড়ুন, হাইকোর্টে এসে যোগ্য়তা প্রমাণ তৃণমূল নেতার, মামলাকারীকেই জরিমানা করলেন বিচারপতি
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, "আমরা চাই, প্রকৃত উপভোক্তারাই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় অন্তর্ভুক্ত হোন। সোমবার কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে আমি এবং শুভেন্দুবাবু দেখা করব। তৃণমূলের নেতারা যাতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকা তৈরির ব্যাপারে কোনও রকম নাক গলাতে না পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাব। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাংলার আসল প্রান্তিক মানুষজন যাতে উপকৃত হন, তা নিশ্চিত করতে পুরনো অস্বচ্ছ তালিকা বাতিল করার দাবি জানাব আমরা।"
বিজেপির দাবি, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাই নয়, কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অধীনস্থ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে লাগামছাড়া দুর্নীতি করছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্য সরকারও নিয়মকানুন না মেনেই এক প্রকল্পের টাকা অন্য প্রকল্পে খরচ করছে বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ তুলছে পদ্মশিবির। সোমবারের বৈঠকে সেই সংক্রান্ত অভিযোগের নথি-সহ দাবিপত্রও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।