হঠাৎ করে সমস্ত রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে দু’দিনের জন্য বৈঠকে ডেকে পাঠিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার চিঠি পাঠিয়ে কমিশন জানিয়েছে, দিল্লিতে ওই বৈঠক হবে বুধ এবং বৃহস্পতিবার। মঙ্গলবার সকালে কমিশন থেকে সরাসরি সিইও দফতরে চিঠি পাঠিয়ে বৈঠকের কথা জানানো হয়। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের নেতৃত্বে কমিশনের ফুল বেঞ্চ এই বৈঠকে অংশ নেবে। দু’দিনের এই বৈঠক শুরু হবে বুধবার বিকেল তিনটে থেকে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দিল্লিতে দু’দিনের এই বৈঠক চলবে। শুধু সিইও নয়, এই বৈঠকে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা রাজ্যের অতিরিক্ত সিইওকে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
advertisement
সূত্রের খবর, এই বৈঠকে বাংলায় ২০০২ সালের সঙ্গে বর্তমান ভোটার তালিকার ম্যাচিংয়ের ম্যাপিংয়ের প্রসঙ্গ উঠে আসবে। রাজ্যে বর্তমান ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৬৪ লক্ষ। এর মধ্যে ‘ SIR’-এর জন্য ম্যাচিংয়ের কাজ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৩ কোটি ৯৬ লক্ষ ভোটারের নাম দুটি ভোটার তালিকাতেই রয়েছে। অর্থৎ ৫২ শতাংশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই হার ৫০ শতাংশ। উত্তর ২৪ পরগনায় ৪৪ শতাংশ, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭২ শতাংশ। আবার উত্তর কলকাতায় হার ৫৫.৩৫ শতাংশ। ‘বাস’-এর কাজ সহজ করার জন্য বিহারের অভিজ্ঞতা থেকে কমিশনের নির্দেশে রাজ্যগুলি এই উদ্যোগ নিয়েছে। বিহারে এই ম্যাচিংয়ের গড় হার ৬৫ শতাংশ ছিল। কোনও কোনও জেলায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ম্যাচিং হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে সেই হার যথেষ্ট কম। সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়ার জন্যই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন:সকাল-সকাল শহরে বিপত্তি, দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল যাত্রীবাহি চলন্ত বাস
বাংলায় ‘ এসআইআর’ করার ক্ষেত্রে বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)-দের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ উঠে আসার সম্ভবনা রয়েছে। কারণ ইতিমধ্যেই একাধিক বিএলও স্থানীয়ভাবে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দলের হুমকির মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ তুলেছে। খোদ কলকাতার পার্ক সার্কাস, খিদিরপুর, কসবা এলাকায় তাদের এখন থেকে ভয় দেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, শুধু আধার কার্ড নিয়ে তাদের নাম ভোটার তালিকায় তুলে দিতে হবে। না হলে বিপদ হবে। বিএলওদের এই হুমকি নিয়ে ভোট কর্মী ঐক্য মঞ্চ, যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ দফায় দফায় সিইও অফিসে গিয়ে বিএলওদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে এসেছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে সিইও দফতর থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী রাজ্য সফরে এসে পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম,বাঁকুড়ার বিএলও-দের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানেও বিএলও-রা নিরাপত্তার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন।
কমিশন চাইছে যত দ্রুত সম্ভব পশ্চিমবঙ্গে ‘SIR’ শুরু করতে। পাশাপাশি আর কোন কোন রাজ্যে সমীক্ষা চালু হতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা হবে আসন্ন বৈঠকে। তাই নির্বাচন কমিশনের এই দুই দিনের বৈঠকের ফলাফলের দিকেই এখন তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। বৈঠক শেষে বাংলায় ‘SIR’ শুরুর ঘোষণা হয় কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়
