TRENDING:

কেন 'দিল্লির ডেক্সটার' আফতাবের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙতে পারতেন না শ্রদ্ধা? জানালেন জুটির বন্ধুরা

Last Updated:

জুটির বন্ধুরা জানান, একাধিকবার আফতাব শ্রদ্ধার উপর শারীরিক নির্জাতন করেছে অতীতে

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#নয়াদিল্লি: শনিবার দিল্লি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে দিল্লির নৃশংস খুনি আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। সোমবার এই ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছে সংবাদমাধ্যম! আফতাবের নৃশংসতায় শিউরে উঠছে গোটা দেশ। দিল্লি পুলিশের জেরায় আফতাব স্বীকার করে নিয়েছে খুনের কথা!
advertisement

তদন্তের স্বার্থে শ্রদ্ধা ও আফতাবের একাধিক পরিচিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দিল্লি পুলিশ। মঙ্গলবার আফতাব ও শ্রদ্ধা, দু'জনেরই বন্ধু লক্ষণ নাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এই বন্ধুই প্রথম শ্রদ্ধার বাবাকে জানান যে, সেপ্টেম্বর মাস থেকে শ্রদ্ধার কোনও খোঁজ মিলছে না! গত ৩ মাস ধরে তাঁর সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ নেই শ্রদ্ধার, শ্রদ্ধার ফোন-ও সুইচড অফ। মঙ্গলবার পুলিশকে লক্ষণ নাদার এও জানালেন, '' একবার শ্রদ্ধা আমায় হোয়াটসঅ্যাপ করে বলে দিল্লির ছাতারপুর এলাকায় ওদের দু'জনের ফ্ল্যাট থেকে আমি যাতে ওকে নিয়ে যাই। ও যদি ওখানে থাকে, তা হলে নাকি রাতে আফতাব ওকে ছাড়বে না, মেরেই ফেলবে।''

advertisement

মঙ্গলবার শ্রদ্ধার আরেক বন্ধু রজত শুক্লাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রজত জানান, '' ২০১৯ সালে শ্রদ্ধা জানায়, ২০১৮ সাল থেকে ও সম্পর্কে রয়েছে। প্রথমদিকে ওরা খুশিই ছিল। কিন্তু পরের দিকে শ্রদ্ধা বলত আফতাব নাকি ওকে মারধর করে।'' রজত এও জানান, '' শ্রদ্ধা আফতাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে বেরিয়ে আসতে চাইত, কিন্তু পারত না।''

advertisement

লক্ষণ নাদার পুলিশকে বলেন, বহুবার সে এবং শ্রদ্ধার অন্যান্য বন্ধুরা ভেবেছিল পুলিশকে জানাবে যে আফতাব শ্রদ্ধার উপর শারীরিক অত্যাচার করছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত আফতাবের প্রতি শ্রদ্ধার ভালবাসা দেখে তারা পিছিয়ে এসেছে। কিন্তু যখন দু'মাসের বেশি সময় পেরিয়ে যায় অথচ তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করে না শ্রদ্ধা, তার ফোনও সুইচড অফ মেলে, তখনই শ্রদ্ধার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে নাদার।

advertisement

মঙ্গলবার শ্রদ্ধা ওয়ালকর খুনে মূল অভিযুক্ত আফতাব পুণাওয়ালাকে দিল্লি-গুরগাঁও এক্সপ্রেসওয়ের উপর সেই জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে সে রোজ রাতে ফেলে আসত প্রেমিকার দেহের এক-একটি অংশ। শ্রদ্ধার দেহের টুকরোগুলো, এমনকী কাটা মাথাটা খুঁজে বের করার জন্যই ঘটনাস্থলে অভিযুক্তকে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। সূত্রের খবর, কোথায় কী ভাবে দেহাংশ তিনি ছড়িয়ে দিত আফতাব, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্রের খবর, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বিকেল পর্যন্ত দেহের ১২টি অংশ খুঁজে বের করেছে জঙ্গল থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার করা দেহাংশগুলি আদৌ মানুষের না কোনও জন্তুর, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে পরীক্ষার পরই! এরপর, শ্রদ্ধার বাবার ডিএনএ-র সঙ্গে ম্যাচ করে দেখা হবে, সেগুলি শ্রদ্ধার দেঝের অংশ কী না। সূত্রের খবর, শ্রদ্ধার কাটা মাথা এখনও পর্যন্ত মেলেনি।

advertisement

আপাতত দিল্লি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে নৃশংস খুনি আফতাব। হাজতে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি, পাশাপাশি হাজতে তাকে যেখানে রাখা হয়েছে, তার বাইরে রয়েছে সর্বক্ষণের পুলিশি পাহারা। ২ জন পুলিশকর্মী হাজতের বাইরে থেকে আফতাবের গতিবিধির উপর নজর রাখছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, আফতাবের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে আর তা ঘেঁটেই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। মোবাইল থেকেই জানা গিয়েছে, প্রেমিকাকে খুনের পর কী ভাবে রক্ত পরিষ্কার করতে হয়, তা গুগুলে সার্চ করে জেনেছিল আফতাব। মানবদেহ টুকরো করে কাটা নিয়েও সার্চ করেছিলেন ইন্টারনেটে।

তদন্তে উঠে আসে, আফতাব ছিল একজন প্রশীক্ষণপ্রাপ্ত শেফ! হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার দরুন মুম্বইয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে শেফের কাজ পেয়েছিলেন। কীভাবে ছুড়ি চালিয়ে হাড়-মাংস কাটতে হয়, মাংস সংরক্ষণ করতে হয়, সে বিষয়ে দক্ষ। খুব সহজেই শ্রদ্ধার শরীরটা ৩৫টি টুকরোয় কেটে ফেলে আফতাব। যদিও সেও ছুড়িটি এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। সূত্রের দাবি, হোটেলে দু’সপ্তাহ মাংস কাটার প্রশিক্ষণ নেন আফতাব। কী ভাবে মাংস টুকরো করতে হয়, তার পর সেই মাংস কী ভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, সবটাই শেখে হাতে-কলমে।

এখানেই শেষ নয়! শ্রদ্ধার দেহের টুকরো রাখার জন খুনের আগামিদিন একটি নতুন ফ্রিজ কেনে আফতাব। ফ্রিজটি সবথেকে বড় স্টোরেজ ক্যাপাসিটির। শ্রদ্ধার শরীরের টুকরোগুলি ডিপ ফ্রিজ এবং তার নীচের ট্রে-তে প্লাস্টিকে মুড়িয়ে রেখে দিয়েছিল। পরের ১৮ দিন ধরে রাতের অন্ধকারে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেহের টুকরো ফেলে আসতেন আফতাব বলে অভিযোগ। রোজ রাত দুটোয় একটি পলিথিনের প্লাস্টিকে করে দেহাংশ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হত আফতাব। সূত্রের খবর, রোজ রাতে ফ্রিজ খুলে প্রেমিকার কাটা মাথা দেখত সে। যে-ঘরে প্রেমিকাকে খুন করেছিল, টুকরো করে কেটেছিল মরদেহ, সে-ই ঘরেই দিব্য রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাত আফতাব।

সহকর্মীর সঙ্গে জমে উঠেছিল প্রেম। কিন্তু বিধর্মী সম্পর্ক মেয়ে নেয়নি ২৬ বছরের তরুণী শ্রদ্ধা ওয়ালকারের পরিবার। তাই প্রেমিক আফতাব আমিন পুনাওয়ালার হাত ধরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান শ্রদ্ধা। প্রেমিকের সঙ্গে লিভ-ইন শুরু করেন রাজধানী দিল্লিতে। সবকিছু ঠিকই চলছিল! আচমকাই ছন্দপতন! প্রেমিক আফতাবকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়াটাই কাল হল শ্রদ্ধার। প্রেমিকের হিংস্রতায় ৩৫ টুকরো হল তাঁর শরীর, আর তা জানতে পরিবারের গেল অনেকটা সময়! ততক্ষণে শ্রদ্ধার টুকরো হয়ে কাটা শরীরের অংশ পচছে দিল্লির জঙ্গলে!তদন্তে দিল্লি পুলিশ জানতে পারে, লিভ-ইন সঙ্গীকে খুনের পর ঠান্ডা মাথায় প্রমাণ লোপাট করেছিলেন আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। কীভাবে দেহ হাপিস করা যাবে? সেই ছক কষেছিল আমেরিকার ক্রাইম শো 'ডেক্সটার' দেখে।

আমেরিকার এই জনপ্রিয় সিরিজ ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত চলেছিল। সিরিজের নায়ক ডেক্সটার মর্গান পুলিশের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ছিল, 'দ্বৈত' জীবনযাপন করত! অবসর সময়ে তার কাজ ছিল খুন করে বেড়ানো।দিল্লি পুলিশ শনিবার গ্রেফতার করেছে আফতাবকে, তার বিরুদ্ধে রুজু হয়েছে খুনের মামলা। পুলিশি জেরায় আফতাব জানিয়েছে, শ্রদ্ধা এবং সে মুম্বইয়ে একই কল-সেন্টারে কাজ করত। কর্মক্ষেত্রেই তাদের ভাললাগার শুরু। সেখান থেকে প্রেম এবং একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিধর্মী প্রেম মেনে নিতে চায়নি শ্রদ্ধার পরিবার। তাই তারা পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং দিল্লির মেহেরৌলিতে একসঙ্গে থাকতে শুরু করে।

সেপ্টেম্বরে শ্রদ্ধার এক বন্ধু তাঁর পরিবারকে জানান যে, আগের আড়াই মাস ধরে কোনও খোঁজ মেলেনি তরুণীর। এমনকি তাঁর মোবাইলও সুইচড অফ। এর পরেই শ্রদ্ধার পরিবার সমাজমাধ্যমে তাঁর অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখেন। দেখা যায়, আগের আড়াই মাস কোনও পোস্ট দেননি তিনি। নভেম্বরে শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ মদন ওয়ালকার মুম্বই পুলিশের দ্বারস্থ হন। আফতাবের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কের কথাও জানান। এর পরেই মুম্বই পুলিশ শ্রদ্ধার ফোনের তথ্য খতিয়ে জানতে পারেন, দিল্লিতে গিয়েছিলেন তিনি। তদন্তভার হাতে নেয় দিল্লি পুলিশ। শনিবার ধরা পড়েন আফতাব। জেরায় স্বীকার করেন, বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন বলেই শ্রদ্ধাকে খুন করেছেন তিনি।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
পুরীর রথ এবার রঘুনাথপুরে, থিমে মন কাড়ছে আপার বেনিয়াসোলের দুর্গাপুজো মণ্ডপ
আরও দেখুন

আফতাবের জানিয়েছে ,লিভ-ইন শুরু করার পর থেকেই শ্রদ্ধা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করে। এই নিয়ে তাদের দু-জনের মধ্যে মাঝেমধ্যেই তুমুল অশান্তি হত। তেমনই বিয়ে করা নিয়ে ১৮ মে দু'জনের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয় এবং তা হাতাহাতিতে গড়ায়। সেই সময়েই রাগের বশে শ্রদ্ধাকে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করে আফতাব। দিল্লি পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এবং কার্যত টোপ পেলে আফতাবকে গ্রেফতার করে। জেরায় আফতাব খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে।

বাংলা খবর/ খবর/দেশ/
কেন 'দিল্লির ডেক্সটার' আফতাবের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙতে পারতেন না শ্রদ্ধা? জানালেন জুটির বন্ধুরা
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল