আফতাব ওই তরুণীকে নিয়ে যে ঘরে ঢুকে যেত, তার দরজার ঠিক পাশেই একটি ফ্রিজ রাখা থাকত৷ আফতাবের সঙ্গিনী ওই তরুণীর ধারণাও ছিল না, ওই ফ্রিজের ভিতরেই তাঁরই সমবয়সি একজন তরুণী শ্রদ্ধা বিকাশ ওয়ালকারের টুকরো টুকরো করা দেহ প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে রাখা রয়েছে৷
পুলিশের অবশ্য দাবি, একা ওই তরুণী নয়, নিজের লিভ ইন পার্টনার শ্রদ্ধাকে খুন করে দেহ ৩৫ টুকরো করে ফ্রিজে রেখে দিয়ে আরও একাধিক মহিলার সঙ্গে নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে সময় কাটাতো আফতাব৷ তাঁরা কেউ এই ভয়ঙ্কর সত্যিটা জানতে পারেননি৷ এর পাশাপাশি আফতাবের বন্ধু, ফুড ডেলিভারি বয় সহ আরও অনেকেই ওই ফ্ল্যাটে এসেছেন গত কয়েক মাসে৷ আফতাব কতটা নৃশংস, তাঁরাও কেউ টের পাননি৷
advertisement
তবে কয়েকটি বিষয় প্রত্যেকেরই নজরে পড়েছিল৷ যেমন আফতাবের ফ্ল্যাটের ভিতরে সবসময় একাধিক ধূপকাঠি জ্বলত৷ নাকে আসত রুম ফ্রেশনারের জোরালো গন্ধ৷ পচা, দুর্গন্ধ চাপা দিতে ঝাঁঝালো রাসায়নিকের গন্ধও আসত ফ্ল্যাটে আসা অতিথিদের নাকে৷ ফ্রিজে রাখা নিজের বান্ধবীর দেহের দুর্গন্ধ চাপা দিতেই যে আফতাব এত আয়োজন করেছিল, তা কল্পনাও করতে পারেননি কেউ৷
তদন্তকারীদের দাবি, গত মে মাসে সম্ভবত শ্রদ্ধাকে খুন করে আফতাব৷ তার একমাস আগে আফতাব এবং শ্রদ্ধা মহারাষ্ট্র থেকে দিল্লিতে চলে আসেন৷ কারণ দু' জনের লিভ ইন সম্পর্ক মেনে নেয়নি শ্রদ্ধার পরিবার৷ জেরা আফতাব স্বীকার করেছে, শ্রদ্ধা বার বার বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় এবং মাঝে মধ্যেই ঝগড়া হওয়ার কারণেই সে শ্রদ্ধাকে খুন করেছে৷
তদন্তের সঙ্গে যুক্ত দিল্লি পুলিশের এক সিনিয়র অফিসার দাবি করেছেন, ডেটিং অ্যাপে অন্য মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাই আফতাব এবং শ্রদ্ধার মধ্যে ঝগড়ার অন্যতম মূল কারণ ছিল৷ ওই তদন্তকারী অফিসারের কথায়, 'আফতাব আমাদের জানিয়েছে, শ্রদ্ধা ওর সঙ্গে অন্য কারও সম্পর্কই তিনি মেনে নিতে পারতেন না৷ যদিও আফতাব অভিযোগ করেছে, ওই একই অ্যাপ ব্যবহার করে শ্রদ্ধাও অন্য পুরুষদের সঙ্গে দেখা করতেন৷ আফতাব আরও জানিয়েছে, শ্রদ্ধার দেহ ফ্রিজে রাখা থাকলেও একাধিক মহিলাকে ফ্ল্যাটে ডেকে তাঁদের শয্যাসঙ্গিনী করেছিল সে৷'
ওই অফিসার আরও জানিয়েছেন, দিল্লি সংলগ্ন যে জঙ্গলে আফতাব শ্রদ্ধার দেহাংশ ফেলে দিয়ে এসেছিল বলে দাবি করেছে, গত শনিবার থেকেই দিল্লি পুলিশের একাধিক দল, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এবং ক্রাইম টিম সেখানে তল্লাশি চালাচ্ছে৷ আফতাবের কথা মতো বেশ কিছু দেহাংশ উদ্ধারও করা হয়েছে৷ প্রাথমিক ভাবে সেগুলি মানুষেরই দেহাংশ বলে মনে করা হচ্ছে৷ ওই দেহাংশ শ্রদ্ধারই কি না, তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষাও করা হবে৷
শ্রদ্ধার বাবা গত কয়েক মাস ধরে মেয়ের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ না করতে পেরে দিল্লি পুলিশের কাছে মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন৷ এর পরেই আফতাবকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ জেরায় প্রেমিকা শ্রদ্ধাকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করার কথা স্বীকার করে নেয় শ্রদ্ধার প্রেমিকা আফতাব৷