ভারতের বৃদ্ধির হার কখনই ৭ শতাংশ ছোঁয়নি । সে মনমোহন সিংয়ের দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারই হোক বা নরেন্দ্র মোদির প্রথম ইনিংস । এমনটাই দাবি মোদি সরকারের প্রথম মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের। এক নতুন গবেষণাপত্রে তাঁর দাবি, ২০১১-২০১২ সাল থেকে ২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের কাছাকাছি বলে দাবি করা হয় কিন্তু বাস্তবে এর হার ৪.৫ শতাংশের বেশি নয়।
advertisement
অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের একটি গবেষণাপত্র সদ্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে । তাতে তাঁর দাবি, মনমোহন সিংয়ের জমানায় দেশের জিডিপি মাপার ফিতে বদলে ফেলা হয় । ২০১১-১২ সাল থেকেই জিডিপি নির্ধারণের পদ্ধতি বদলে যেতে থাকে। সেই প্রবণতা নরেন্দ্র মোদির আমলেও বজায় ছিল । বস্তুত দ্বিতীয় এনডিএ জমানায় বৃদ্ধির হার সাত শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে দাবি করতেন মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের মতে, দেশের বৃদ্ধির হার কখনই সাড়ে চার শতাংশ ছাড়ায়নি । ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে তা সাড়ে তিন থেকে ৫.০৫ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে । অর্থাৎ গড়ে জিডিপির হারে প্রায় আড়াই শতাংশ জল মেশানো ছিল ।
জিডিপি-বৃদ্ধির হার দেশের অর্থনৈতিক প্রগতির সূচক। সেই সূচকে জল মেশালো কে? অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম এর জন্য কোনও রাজনৈতিক দল বা নেতাকে দায়ী করেননি। তাঁর মতে, মূলত একশ্রেণির আর্থিক বিশেষজ্ঞ এবং আমলাই বৃদ্ধির হার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়েছেন । অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম মনে করছেন, টানা ছ’বছর জিডিপির হার আগাম আঁচ করতে গিয়েই যাবতীয় হিসেব গুলিয়ে গিয়েছে ।
বৃদ্ধির হার যা পূর্বাভাস করা হয়েছিল, কাজের বেলায় তা ঘটেনি । মনমোহন থেকে মোদি জমানার সতেরোটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সূচক বিশ্লেষণ করেই এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম । ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে দেশের বৃদ্ধির ৫.০৮ নেমে এসেছে ।
যা ইদানিংকালের নিম্নতম । কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি রুপায়ন মন্ত্রকও বৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস সাত শতাংশ থেকে ৬.০৮ শতাংশে কমিয়ে দিয়েছে। ক্ষমতায় এসেই হার্ভার্ড এবং জন হপকিন্স স্কুল ফর অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশানাল স্টাডিজের অধ্যাপক অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনকে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা পদে বসিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি।২০১৪-র অক্টোবর থেকে ২০১৮ জুন পর্যন্ত ওই দায়িত্ব সামলেছেন অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম । নতুন গবেষণাপত্রের শেষে তাঁর আক্ষেপ, ভুল পরিসংখ্যান থেকে অর্থনীতির কোনও সুরাহা হয় না । কারণ তাতে আর্থিক সংস্কারের তাগিদ কমে যায় । অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম জানিয়েছেন, ভারতে জিডিপি-র হার বাড়লেও তা দেশের অর্থনীতিতে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। ফলে, চাকরির বাজারে মন্দা আগেও যা ছিল, তা-ই থেকে গিয়েছে।