হামলার ৮দিন পর এনআইএ-র জেরার মুখে আরও অস্বস্তিতে পড়েন এসপি সলবিন্দর সিং। সোমবার দু-দফায় সলবিন্দরকে ১৬টি প্রশ্ন করেন এনআইএ -র তদন্তকারীরা। হামলার পর এসপির বিভিন্ন বয়ান মিলিয়ে দেখেও ফের জেরা হয় তাঁকে। এনআইএ সূত্রে খবর, বেশিরভাগ প্রশ্নেই গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতে পারেননি এসপি।
এসপিকে করা এনআইএ-এর প্রশ্নবান -
১)গভীর রাতে ধর্মস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নেন এসপি?
advertisement
২) ঠিক কখন গুরুদ্বারে যান এসপি? সেখান থেকে বেরিয়ে পীর বাবা দরগাতেই বা কতক্ষণ ছিলেন তিনি?
৩) সাড়ে ৮ টা নাগাদ ফোনে গুরুদ্বার বেশি রাত পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দিলেও পুলিশের কাছে প্রথমে কেন তা অস্বীকার করেন তিনি?
৪) সরকারি গাড়ি নিয়ে বেরলেও এসপি নিজস্ব দেহরক্ষীকে সঙ্গে নিলেন না কেন?
৫) গুরুদ্বার থেকে বেরিয়ে দরগায় যেতে কতসময় লেগেছিল এসপির?
৬) বাকি সময়টা তিনি কী করছিলেন?
৭) জঙ্গিরা রাঁধুনি ও বন্ধুসহ অপহরণ করার পর তাদের মধ্যে কী কথাবার্তা হয়েছিল?
৮) এসপি ও তাঁর রাঁধুনিকে যেখানে ছেড়ে জঙ্গিরা, তা চিহ্নিত করতে কেন পারলেন না এসপি?
৯) পিছমোড়া করে হাত বাঁধা থাকলেও তিনি পুলিশে ফোন করলেন কীভাবে?
জঙ্গিহানার সতর্কতা সত্ত্বেও গভীর রাতে রক্ষী ছাড়াই ধর্মস্থান গিয়েছিলেন এসপি। এখান থেকে তদন্তের মোড় ঘোরাতে চাইছে এনআইএ। গোটা ঘটনায় এসপির যোগ নিয়ে বেশ কয়েকটি সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে এনআইএ গোয়েন্দারা।
সম্ভাবনা ১
জঙ্গিরা পরিচয় জেনে যাওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে বিমানঘাঁটির তথ্য জানিয়ে দেন এসপি?
সম্ভাবনা ২
পরিকল্পনা মতোই রাতে ধর্মীয়স্থানে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন এসপি। সেক্ষেত্রে জঙ্গিদের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই তাঁর যোগাযোগ থাকার কথা
সম্ভাবনা ৩
এর আগে নিষিদ্ধ সংগঠনের সভায় উপস্থিতি ও যৌন হেনস্থার অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়েছিলেন সলবিন্দর। সেই সংক্রান্ত ফাইলও চেয়ে পাঠিয়েছে এনআইএ
সোমবার জেরায় সলবিন্দরের থেকে বেশ কিছু নথিও চেয়েছেন এনআইএ গোয়েন্দারা। পাঠানকোট হামলার যাবতীয় অসঙ্গতির শুরু এসপি ও তাঁর সঙ্গীদের অপহরণ ও তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই। এসপি-র দাবিতে প্রচুর অসঙ্গতি। তেমনি এসপির সঙ্গেও তাঁর বন্ধুর বয়ানও মিলছে না। হামলা নিয়ে সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও একা বাইরে যাওয়ার ঝুঁকি কীভাবে নিলেন এসপি? এই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ৷ এখনও জবাব পাওয়া যায়নি, এসপি কখন নিজের পরিচয় দেন জঙ্গিদের কাছে ৷ এসপি ও তাঁর রাঁধুনিকে ছেড়ে দেওয়া হলেও এসপির বন্ধুকে আটকে রাখে জঙ্গিরা। কেন? তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। অসঙ্গতির এখানেই শেষ নয়। এসপি ও রাধুঁনি মদন গোপাল, দু’জনকেই চোখ মুখ বাঁধা অবস্থায় জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুজনেরই হাত-পা পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল। তারা হাতের বাঁধন কীভাবে খুললেন, সেই ব্যাপারে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি ৷ অসঙ্গতি রয়েছে আরও একটি বিষয়ে, এসপি ও তাঁর রাঁধুনিকে মারধর করা হয়নি। অথচ এসপির বন্ধুকে নৃশংসভাবে মারধর করা হয়। এমনকী তাঁকে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে যায় জঙ্গিরা। কেন এই দু’রকমের আচরণ করলেন জঙ্গিরা, সেই নিয়ে গাঢ় হচ্ছে রহস্য ৷ এসপি নিজের সমর্থনে মুখ খুললেও এইসব প্রশ্ন ঘিরে এখনও ধোঁয়াশা।
এসপি সলবিন্দর সিংকে জেরা করছেন এনআইএ আধিকারিকরা ৷ এমনকি এসপির রাধুঁনি মদন গোপালকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়ে এনআইএ ৷ এনআইএ সূত্রে খবর, বয়ানে অসঙ্গতির কারণে, এসপির পলিগ্রাফ টেস্ট করা হতে পারে ৷ পলিগ্রাফ টেস্টের জন্য আদালতের ও সলবিন্দরের অনুমতির প্রয়োজন ৷ দু’পক্ষের অনুমতি পেলে তবেই হবে পলিগ্রাফ টেস্ট৷