গত মঙ্গলবারের সেই বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় আসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের পরে৷ সেই পোস্টে রীতিমতো অনুরাগ ঠাকুরের পিঠ চাপড়ে দিতে দেখা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদিকে৷
মোদি নিজের পোস্টে অনুরাগ ঠাকুরের মঙ্গলবারের সংসদ অধিবেশনে দেওয়া সমগ্র বক্তৃতার ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আমার যুবা ও কর্মশক্তিতে ভরপুর সহকর্মী অনুরাগ ঠাকুরের বক্তব্য শোনা উচিত সকলের। মজার ছলে আসল তথ্য রয়েছে তাতে। ইন্ডিয়া জোটের নোংরা রাজনীতির সামনে আয়না ধরেছে এই ভাষণ।’
advertisement
এদিকে, অনুরাগ ঠাকুরের এহেন মন্তব্যকে চূড়ান্ত মানহানিকর, অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিও প্রধানমন্ত্রীর শেয়ার করা নিয়ে বুধবার নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের অভিযোগ এনেছে কংগ্রেস৷
মঙ্গলবারের মতো বুধবারও অনুরাগ ঠাকুরের মন্তব্য ইস্যুতে উত্তাল হয় লোকসভা৷ কংগ্রেসের সাংসদেরা জাতি সুমারি দাবি করে স্লোগান তুলতে থাকেন৷ রাহুল গান্ধিকে নিয়ে গত মঙ্গলবার অনুরাগ ঠাকুর যে সমস্ত মন্তব্য করেছেন, সেগুলিকে ‘চুড়ান্ত অবমাননাকর’ এবং ‘অসাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করেন কংগ্রেস সাংসদেরা৷ শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও শেয়ার করে ‘স্বাধিকারভঙ্গ’ করেছেন বলেও অভিযোগ তোলে কংগ্রেস৷
লোকসভায় কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক কে সুরেশ মোদির বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনার কথা জানান সর্বপ্রথম। তিনি বলেন, “গতকাল বাজেট অধিবেশন চলাকালীন, বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে অসংসদীয় ভাষার প্রয়োগ করেছেন। গোটা ভাষণে অপমানজনক ভাষায় কথা বলেছেন উনি। আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানাই। লোকসভার চেয়ারম্যান রেকর্ড থেকে অসংসদীয় ওই শব্দগুলি রেকর্ড থেকে বাদ দেন। কিন্তু গতকাল রাতে বাদ দেওয়া ওই অংশই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন মোদি, যা লোকসভার নিয়মের পরিপন্থী।”
এর পর লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে মোদির বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের নোটিস জমা দেন পঞ্জাবের জলন্ধরের সাংসদ চরণজিৎ সিংহ চান্নি। কংগ্রেসের অভিযোগ সংসদের যে অমর্যাদা করেছেন অনুরাগ, তাতে উৎসাহ জুগিয়েছেন মোদি।
‘জাতি মন্তব্য’ নিয়ে বিজেপির তীব্র নিন্দা করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে জানান, গান্ধি পরিবার হচ্ছে শহিদের জাতি, যা বিজেপি-আরএসএস কখনও বুঝবে না৷ তিনি বলেন, তাঁর দল জাতিগত অবমাননা সহ্য করতে রাজি, কিন্তু, জাতি সুমারির দাবিতে অটল৷
খাড়্গে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্টে লেখেন, ‘হ্যাঁ, আমি দলিত, কিন্তু জানিনা আমাদের সংখ্যাটা কত? হ্যাঁ, আমি জনজাতি, কিন্তু, আমি জানিনা, আমরা সংখ্যায় কত? হ্যাঁ, আমি ওবিসি, কিন্তু, আমি জানি না আমরা সংখ্যায় কত৷ এই দেশের উন্নয়নে আমাদের অবদান কতটা তা জানার সময় চলে এসেছে৷ বিজেপি আরএসএস এখনও আমাদের পিছিয়ে রাখা নিয়ে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে৷ আমাদের সংরক্ষণের অধিকার আমাদের থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইছে’৷
গত সোমবার সংসদে জাতি সুমারি নিয়ে সুর চড়াতে দেখা যায় লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধিকে৷ মহাভারতের পদ্ম আকৃতির চক্রব্যূহের প্রসঙ্গ তুলে তিনি দাবি করেন, দেশের জাতি, জনজাতি, দলিতদের চক্রব্যূহে ফেলতে চাইছে বিজেপি৷ বিজেপির পদ্ম চিহ্নের সঙ্গে মহাভারতের চক্রব্যূহের তুলনা করেন তিনি৷ দাবি তোলেন জাতি সুমারির৷
বিরোধী দলনেতার বক্তৃতার পরের দিনই এ নিয়ে সংসদে রাহুল গান্ধিকে বিপুল কটাক্ষ করেন বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর৷ এমনকি, অভিযোগ, নাম না করে গান্ধি পরিবারের ‘জাতি’ নিয়ে মন্তব্য করতে দেখা যায় তাঁকে৷ তারপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিরোধিতা শুরু করে দেয় কংগ্রেস তথা অন্য বিরোধী দল৷
অনুরাগ ব্যাখ্যা দেন, তিনি কারও নাম বলেননি। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন কিরেন রিজিজু-সহ অন বিজেপি মন্ত্রী-সাংসদেরা৷ প্রশ্ন তোলেন, জাতি গণনা যাঁরা চাইছেন, নিজের জাতি উল্লেখ করতে তাঁদের আপত্তি কোথায়? তাছাড়া, অনুরাগ কারও নাম তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেননি বলে জানিয়েছেন তাঁরাও৷
এদিকে সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব অনুরাগকে প্রশ্ন করেছেন, ‘‘আপনি কারও জাত কী, তা নিয়ে কী ভাবে প্রশ্ন তুলতে পারেন?’’ এ নিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরা পরে নরেন্দ্র মোদিকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘‘আর্থ-সামাজিক জাতগণনা দেশের ৮০ শতাংশের দাবি। সংসদে কি দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে গালিগালাজ করা হবে? নরেন্দ্র মোদি স্পষ্ট করুন, তাঁর নির্দেশে এ সব হয়েছে কি না?’’