এক দশকের প্রতীক্ষার পর রাজ্যসভায় পাশ হয় ঐতিহাসিক জিএসটি বিল। রাজ্যসভার পর এদিন সোমবার লোকসভায় জিএসটি বিল পেশ করা হলে উপস্থিত সব সাংসদদের সমর্থন পেয়ে পাশ হয়ে যায় এই বিল ৷ এদিন সংসদে জিএসটি নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘গ্রাহকই রাজা, এটাই জিএসটি-র বার্তা ৷’
প্রত্যাশা মতো ১২২ তম সংবিধান সংশোধন বিল পাশ হয় রাজ্যসভায়। দেশজুড়ে অভিন্ন করব্যবস্থা চালুর পথ প্রশস্ত হল এই বিল পাশের মাধ্যমে। আলাদা আলাদা একগুচ্ছ কর নয়, সব পণ্য কিনতে ও পরিষেবা পেতে দিতে হবে একটাই কর। কংগ্রেসের আপত্তি বিল পাশে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল এনডিএ সরকারের। তাদের তিনটি দাবির দুটি মেনে নেয় কেন্দ্র। তবে বিলে করের সর্বোচ্চ হার বেঁধে দিতে রাজি হননি জেটলি। তামিলনাড়ু ছাড়া সব রাজনৈতিক দল জিএসটি বিলের পাশে দাঁড়ায়।
advertisement
আগামী শীতকালীন অধিবেশনে সেন্ট্রাল সার্ভিস ট্যাক্স, স্টেট সার্ভিস ট্যাক্স ও ইন্টার সার্ভিস ট্যাক্স নামে মোট তিনটি বিল আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বিলগুলি পাশ হয়ে গেলে জিএসটি চালুতে আর বাধা থাকবে না বলেই ওয়াকিবহাল মহলের মত।
লোকসভায় বিল পাশ হয়ে যাবার পর এবার তা রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হবে। পার্লামেন্টে পাশ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ১৬ টি রাজ্যের অনুমোদন পেলেই আইন হতে আর কোনও বাধা থাকবে না GST বিলের সামনে ৷
রাজ্যগুলিকে বিক্রয়কর বাবদ প্রাপ্য মিটিয়ে দেবে কেন্দ্র যাতে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে না পড়ে। তবে বিল পাশ মানে পরের দিন থেকেই অভিন্ন করব্যবস্থা কার্যকর হবে, তা নয়। অর্থবছরের গোড়ায় চালু হতে পারে পণ্য পরিষেবা। অথবা তা কার্যকর করা যেতে পারে যে কোনও মাস থেকেই। তবে GST পাশ মোদি সরকারের একটি বড় সাফল্য ৷
ক্রেতাকে একটি পণ্য কিনতে বা পরিষেবা নিতে বর্তমানে একাধিক ট্যাক্স বা কর দিতে হয়। পরিষেবা কর, উৎপাদন শুল্কের মতো কিছু কর নেয় কেন্দ্র। রাজ্যগুলি নেয় সেলস ট্যাক্স, লাক্সারি ট্যাক্স, ভ্যাটের মতো কর। আলাদাভাবে না নিয়ে, এক ছাতার তলায় সব করকে আনতেই গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা পণ্য ও পরিষেবা করের জন্ম। অর্থাৎ, ক্রেতা একটি পণ্য কিনলে বা পরিষেবা নিতে চাইলে যে একটিমাত্র কর দেবেন, সেটাই জিএসটি।
GST অথবা অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর কী তা জেনে নিন,
পণ্য ও পরিষেবা কর কী?
একটি বিশেষ কর ব্যবস্থা যা বর্তমান পরোক্ষ করের পরিবর্তে কার্যকর হবে ৷ পণ্য এবং পরিষেবা, দু'টির উপরই কার্যকর হবে জিএসটি ৷ এই কর ব্যবস্থার দু'টি স্তর বা কাঠামো। কেন্দ্রীয় জিএসটি এবং রাজ্য জিএসটি ৷ পণ্য ও পরিষেবা কর চালু হলে কেন্দ্রে ও রাজ্যের একাধিক কর বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় করের বিলুপ্তিতে রয়েছে, সেন্ট্রাল এক্সাইজ ডিউটি, অতিরিক্ত আবগারি ও কাস্টম ডিউটি, স্পেশাল অ্যাডিশনাল ডিউটি অফ কাস্টমস বা স্যাড, পরিষেবা কর ৷ পণ্য ও পরিষেবা প্রদানে সেস ও সারচার্জ ৷
রাজ্যের করের বিলুপ্তি রয়েছে, ভ্যাট, কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর, পারচেজ ট্যাক্স, লাক্সারি ট্যাক্স, প্রবেশ কর, বিনোদর কর, বিজ্ঞাপন, লটারি, বাজি ও জুয়ায় কর, স্টেট সেস অ্যান্ড সারচার্জ ৷
অর্থনীতিবিদের একটা বড় অংশের মতে, জিএসটি চালু হওয়ার পর লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি। উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষও। জিএসটির সুবিধা হল করফাঁকি রোধ, কমবে করের হার, কমবে কর ব্যবস্থার জটিলতাও, ব্যবসা-বাণিজ্যের সরলীকরণ, বাড়বে জাতীয় আয় ৷
এখন কোনও পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে, তা বিক্রির জায়গা পর্যন্ত নানা ধাপে কর দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে যেগুলো বুঝতেও পারেন না ক্রেতা বা উপভোক্তা। পরতে পরতে কর না চাপিয়ে, দেশে একটি মাত্র কর ব্যবস্থা চালু করাই জিএসটির লক্ষ্য।