বিশ্বকর্মা পুজোর ঠিক আগের দিন দেশের বিশ্বকর্মাদের সম্মানিত করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ ঘোষণা ছিল আগে থেকেই৷ রবিবার দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ দিল্লির দ্বারকায় ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অ্যান্ড এক্সপো সেন্টার থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন প্রকল্প ‘পিএম বিশ্বকর্মা’ চালু করলেন। এই অনুষ্ঠান চলাকালীন ‘প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা’-এর প্রতীক, ট্যাগলাইন এবং পোর্টালও চালু করেন তিনি।
advertisement
পিএম বিশ্বকর্মা যোজনা চালু করা উপলক্ষ্যে এদিন ১৮ জন বিশ্বকর্মাকে ব্যক্তিগত ভাবে সম্মানিত করেন তিনি। মোদি বলেন, ‘‘বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ৷ এটি কারিগরদের জন্য উৎসর্গীকৃত৷ ‘বিশ্বকর্মা জয়ন্তী’-তে সমস্ত দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমি আনন্দিত যে আজ আমি সারা দেশের লক্ষ লক্ষ বিশ্বকর্মা বন্ধুদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। ‘বিশ্বকর্মা যোজনা’ দেশের কারিগরদের জন্য একটা ‘নতুন আশার আলো’। শরীরে মেরুদণ্ড যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সমাজজীবনেও বিশ্বকর্মা গুরুত্বপূর্ণ।’’
এদিন প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে উঠে আসে ‘যশোভূমি’র উদ্বোধন প্রসঙ্গও৷ বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের পাশাপাশি আজ আমাদের দেশ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র যশোভূমিও পেয়েছে। এখানে যে ধরনের কাজ করা হয়েছে, তাতেই আমাদের সমস্ত বিশ্বকর্মা ভাই ও বোনদের কর্ম নিপুণতা প্রকাশ পেয়েছে। এই ‘যশোভূমি’ দেশের প্রতিটি কারিগর, প্রতিটি বিশ্বকর্মা বন্ধুকে উৎসর্গ করছি আমি।’’
এই নতুন পিএম বিশ্বকর্মা যোজনায় প্রাথমিক ভাবে ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ প্রকল্পের সূচনার পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সরকার দেশের বিশ্বকর্মাদের উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮টি ভিন্ন সেক্টরে গুরুত্ব দেওয়া হবে৷ কেন্দ্রীয় সরকার পিএম বিশ্বকর্মা প্রকল্পে ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে৷’’
স্বাধীনতা দিবসের দিনই ঘোষণা করেছিলেন৷ এবার তা রূপায়ণ হতে চলেছে৷ জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের অধীনে শিল্পীরা ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য পাবেন। কারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন? স্বর্ণকার, কামার, তাঁতি, ধোপা, নাপিত, যাদের অধিকাংশই ওবিসি জনগোষ্ঠীর, তাঁরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন বলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে জানানো হয়েছে। তাঁদের জন্য পাঁচদিনের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরেরও ব্যবস্থা করা হবে। প্রশিক্ষণের পর তাদের সার্টিফিকেটও দেওয়া হবে। https://diupmsme.upsdc.gov.in/ মাধ্যমে আবেদন করা যাবে৷
এর পরের ধাপে ১৫ দিনের অ্যাডভান্সড ট্রেনিং শিবিরেরও আয়োজন করা হবে। প্রশিক্ষণ শিবিরের প্রতিদিনই অংশগ্রহণকারীরা ৫০০ টাকা করে ভর্তুকি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
এই প্রকল্পের অধীনে শিল্পী-কারিগরদের পিএম বিশ্বকর্মা সার্টিফিকেট ও আইডি কার্ড দেওয়া হবে। এই কার্ডের মাধ্যমে প্রথম কিস্তিতে শিল্পীরা এবং কারিগরেরা প্রথম দফায় ১ লক্ষ টাকা ও দ্বিতীয় কিস্তিতে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য় পাবেন। এর জন্য সুদের হারও ন্যূনতম মাত্র ৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের অধীনে থাকা প্রত্যেক উপভোক্তা টুলকিট ভাতা বা ইনসেনটিভ বাবদ ১৫ হাজার টাকা ই-ভাউচার বা ই-রুপি পাবেন। এছাড়া, তাঁদের নিজের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য কম সুদে জমানতহীন ঋণের সুবিধাও দেওয়া হবে। অর্থাৎ, এই প্রকল্পের অধীনে তাঁদের ঋণের জন্য কোনও কিছু বন্ধক বা জমা দিতে হবে না। এই প্রকল্পের অধীনে আরও একটি অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছে৷ এক্ষেত্রে প্রতিটি আর্থিক লেনদেন পিছু ১ টাকা করে পাবেন উপভোক্তারা। মাসে সর্বোচ্চ ১০০টি আর্থিক লেনদেনে এই টাকা পাওয়া যাবে।
পিএম বিশ্বকর্মা প্রকল্পের অধীনে গুণগত সার্টিফিকেশন, ব্রান্ডিং, বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য মার্কেটিংয়ের জন্য ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২৪ থেকে ২০২৮ অর্থবর্ষের জন্য মোট ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।