পঞ্চায়েতের আগে নজরে জেলার সংগঠন। লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখেই অধিকারীদের জেলায় সংগঠনে জোর শাসক দলের। গতকালই শুভেন্দু অধিকারী চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে জানিয়েছেন, পূর্ব মেদিনীপুরের দুই আসন কাঁথি ও তমলুক দখল করবেন তিনি। এই অবস্থায় শাসক দলের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা রাখেন, সেদিকেই সবার নজর।
আরও পড়ুন: মমতার 'দিল্লি চলো' ডাক... এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজধানীতে ধরনা তৃণমূলের
advertisement
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মুখ ফেরায়নি তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে৷ এমন কি, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে জোড়া ফুল শিবির৷ যদিও বাংলার বিধানসভা ভোটের পর থেকে এখন পূর্ব মেদিনীপুর জুড়ে জোর লড়াই জোড়া ফুল বনাম পদ্ম ফুলের। দুই লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীকে জেতা সাংসদ রয়েছেন। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করে অধিকারী পরিবারের দুই সাংসদের মন পড়ে আছে অন্যত্র৷
এক সময় তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে যিনি এই জেলা দেখতেন তিনি এখন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা৷ আর বিধানসভা ভোটের লড়াইয়েও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় জোর লড়াই হয় তৃণমূল কংগ্রেস বনাম বিজেপির মধ্যে। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরের রিপোর্ট ছিল, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দু্র্বল হয়ে পড়ে সংগঠন। আর তার জেরেই ফল ভুগতে হয় শাসক দলকে৷ সংগঠন ঢেলে অবশ্য সাজানো হয়েছে।
হলদিয়া ও কাঁথিতে সভা করেছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। এমন কি, কুণাল ঘোষকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে আত্মসন্তুষ্টির জায়গা প্রস্তুত করতে রাজি নয় তৃণমূল কংগ্রেস৷ তাই এবার বুথ কর্মী সম্মেলন করবেন খোদ চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক গত পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল -
- ২০১৮ পঞ্চায়েত ভোটে গ্রাম পঞ্চায়েতের ২১১ আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ১৮৩টি। বিজেপি পেয়েছিল ২১। অন্যান্যরা পেয়েছিল ৭ আসন।
- পঞ্চায়েত সমিতির ২১ আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ২০'টি। বিজেপি পেয়েছিল ১'টি আসন।
- জেলা পরিষদের ৫১ আসনই দখল করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস।
এই জেলার ২ লোকসভা আসন রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেস। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ২০০৭ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেস সেখানে রাজনৈতিক ভাবে লাভবান। ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানে ভাল ফল করে তৃণমূল। বাম আমলে সেই ফল গোটা রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেছে।নন্দীগ্রাম আন্দোলনের জেরে তখন রাজনৈতিক মহলের নজরে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম আসন হারলেও কিছু এলাকায় ভাল ফল করে তৃণমূল।
আরও পড়ুন: ভোট এলেই মমতার পায়ে কী হয়! বিস্ফোরক দাবি শুভেন্দুর! ফিরে এল নন্দীগ্রাম-স্মৃতি
ইতিমধ্যেই সাংগঠনিক বৈঠকে এই সব জেলাকে আগে ভাগেই পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে লোকসভার প্রস্তুতি শুরু করে দিচ্ছে শাসক দল।পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক ও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের দুই সাংসদ সদস্যই তৃণমূল কংগ্রেসের। দু'জনেই অধিকারী পরিবারের সদস্য। যে অধিকারী পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব দীর্ঘতর হয়েছে জোড়া ফুল শিবিরের। বিরোধী দলনেতার জেলার এই দুই আসন নিয়ে চর্চা আছে বিজেপির অন্দরেও ৷ইতিমধ্যেই এই দুই লোকসভা আসনের বুথ স্তরের সংগঠনে একাধিক বদল এসেছে। যদিও নন্দীগ্রামের বুথ স্তরের বদল নিয়ে নানা অনুযোগ উঠে এসেছে তৃণমূলের অন্দরে ৷
কাঁথিতেও বুথ স্তরের ক্ষেত্রে একাধিক বদল এসেছে। প্রকাশ্যে না বললেও দলের অন্দরে এই নিয়ে চর্চা হয়েছে। যদিও গত ৮ অগাস্ট নেতাজি ইন্ডোরের বিশেষ অধিবেশনে বুথ স্তরের বিষয় নিয়ে তা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরুপ বিশ্বাস, সুব্রত বক্সীকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানানো হয়। তাই জেলা পরিষদের সভাধিপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনাতেও বুথ স্তরের সংগঠনের বিষয়ে জোর দেওয়া হতে পারে।
রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, পূর্ব মেদিনীপুর তৃণমূলের প্রেস্টিজ ফাইট। তাই রাজনৈতিক ভাবে এখন থেকেই জমি শক্ত করতে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস।এই অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সফর রাজনৈতিক ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে সকলে। কারণ এখন থেকেই এই জেলার সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে চায় শাসক দল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় মমতা-অভিষেক সভা করবেন। পূর্ব মেদিনীপুর অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। ওখানে একটা পরিবারকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। সেখানে থেকেই বিশ্বাসঘাতকতা শুরু হয়েছিল। তাই পূর্ব মেদিনীপুর এই সফর রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্য্যপূর্ণ।