নয়াদিল্লি: ২৭ অক্টোবর দু’টি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত জম্মু ও কাশ্মীরের ভারতভুক্তির বার্ষিকী। এ বার তার ৭৫তম বর্ষ। দ্বিতীয়ত, জওহরলাল নেহরুর বৃহৎ ভুল সিরিজের বার্ষিকী।
১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজন নীতি শুধুমাত্র ব্রিটিশ ভারতে প্রযোজ্য হয়েছিল। দেশীয় রাজ্যগুলির কাছে ভারত বা পাকিস্তানের যে কোনও একটি দেশকে বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ওই রাজ্যবাসীর সঙ্গে কোনও পরামর্শের ব্যবস্থা ছিল না।
advertisement
লৌহমানব সর্দার প্যাটেল এই সব রাজ্যগুলিকে একত্র করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এই ৫৬০টি রাজ্য কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্টের আগে ভারতের সঙ্গেই ছিল। হায়দরাবাদ এবং জুনাগড় নিয়ে সমস্যা তৈরি হলেও প্যাটেলের কৌশলে তা মিটে যায়। কাশ্মীর এর মধ্যে ছিল না। গত সাত দশক ধরে এই মিথ্যা প্রচার চলেছে। কাশ্মীরের তৎকালীন শাসক মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগদানের বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু আসলে নেহরুই তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির কারণে এই সমস্যাগুলি তৈরি করেছিলেন।
১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই লোকসভায় নেহরু নিজেও সত্যগুলি স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে অনানুষ্ঠানিক ভাবে জুলাই বা জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে যোগদানের প্রশ্নটি উঠে আসে। সেখানে জনপ্রিয় সংগঠন, ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল এবং মহারাজার সরকারের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ ছিল।’
নেহরুর প্রথম ভুল—
১৯৫২ সালের বক্তৃতায় নেহরু বলেন, ‘যদিও মহারাজা এবং তাঁর সরকার ভারতে যোগ দিতে চান। তবে আমরা আরও বেশি কিছু চাই, তা হল, গণ অনুমোদন।’
ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী দেশীয় রাজ্যের ক্ষেত্রে গণ অনুমোদনের কোনও প্রয়োজন ছিল না।
কাশ্মীর অনাদিকাল থেকেই ভারতীয় সভ্যতা চেতনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। গণ অনুমোদনের ভূতটিকে কাশ্মীরের জন্য নেহরু নিজে আবিষ্কার করেছিলেন।
আরও পড়ুন- পঞ্চায়েতের আগে তৃণমূলের নয়া কর্মসূচি, ‘চলো গ্রামে যাই’
১৯৪৭ পরবর্তীকালেও নেহরুর ভুল বিদ্যমান ছিল। বিভাজন-পরবর্তী রক্তপাত ও হিংসার সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও, নেহরু কাশ্মীর অধিগ্রহণের আগে তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থ পূরণের বিষয়ে অনড় ছিলেন। নেহরু কাশ্মীরে যে শূন্যতা তৈরি করেছিলেন তার আবহেই পাকিস্তান কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় আদিবাসীদের ছদ্মবেশে ১৯৪৭ সালের ২০ অক্টোবর কাশ্মীরের ভূখণ্ডে আক্রমণ করে। তারপরও নেহেরু অচল ছিলেন। ২১ অক্টোবর, ১৯৪৭, নেহরু জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী এমসি মহাজনকে একটি চিঠির মাধ্যমে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে ‘এই পর্যায়ে ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আনুগত্যের কোনও ঘোষণা করা সম্ভবত অবাঞ্ছিত হবে।’
তিনি লেখেন, ‘আমি আপনাকে একটি অস্থায়ী সরকার গঠনের মতো পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছি। শেখ আবদুল্লাহ, কাশ্মীরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি, তাঁকে সরকার গঠন করতে বলা যেতে পারে।’
কাশ্মীরকে অপরিবর্তনীয় ভাবে ভারতের সঙ্গে একীভূত করার চেয়ে নেহরুর কাছে তাঁর বন্ধু শেখ আবদুল্লাহকে ক্ষমতায় বসানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
নেহরুর দ্বিতীয় ভুল—
চূড়ান্ত ভাবে যোগদানকে অস্থায়ী হিসাবে ঘোষণা করেছিল।
নেহরুর তৃতীয় ভুল—
১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি জাতিসঙ্ঘের কাছে রিপোর্ট পাঠানো। নেহরুই কাশ্মীরকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ হিসাবে স্বীকার করে পাকিস্তানকে একটি অবস্থান দিয়েছিলেন।
নেহরুর চতুর্থ ভুল—
কাশ্মীরে জাতিসঙ্ঘের বাধ্যতামূলক গণভোট ভারত কর্তৃক বন্ধ করা হচ্ছে বলে রটাতে দেওয়া।
নেহরুর পঞ্চম ভুল—
৩৭০ অনুচ্ছেদের সৃষ্টি এবং স্থায়ীকরণ (সংবিধানের অন্তর্বর্তী খসড়ায় অনুচ্ছেদ ৩০৬এ)।
একজন মানুষের ভুলে ৭০ বছর নষ্ট হয়েছে। গত ৫ অগাস্ট, ২০১৯ ইতিহাস মোড় নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অবশেষে ১৯৪৭ সাল থেকে ভারতকে বাধাগ্রস্ত করে রাখা ভুল তালিকার উন্মোচন করেছিলেন। ৩৭০ ধারা বাতিল করা হয়েছিল।
উপরের নিবন্ধে বিভিন্ন ব্যক্তির উদ্ধৃতি দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত উৎসগুলি হল:
নেহরুর ২৪ জুলাই ১৯৫২ লোকসভায় বক্তৃতা যেখানে তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি এখনও ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ পর্যন্ত ভারতে কাশ্মীরকে গ্রহণ করার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।
‘সিলেক্টেড ওয়র্কস অফ নেহরু’ সিরিজ ২, ভলিউম ৪ অগাস্ট ১৯৪৭-ডিসেম্বর ১৯৪৭
১৯৪৯ সালের ১০ জানুয়ারি তারিখের জাতিসঙ্ঘের চেয়ারম্যান এবং প্রতিবেদক মহাসচিবকে সম্বোধন ভারত ও পাকিস্তানের কাছে প্রেরিত চিঠির দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন
গণপরিষদ বিতর্ক, ১৭ অক্টোবর, ১৯৪৯