ফাটল দেখা দেওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০০ বাড়ি খালি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। গত শনিবার পরিস্থিতি বুঝে সেই তালিকায় যোগ করা হয়েছিল আরও ৬৫টি পরিবার। তারমধ্যে ১১টি পরিবারের ঠাঁই হয়েছে অস্থায়ী শিবিরে। বর্তমানে, ফাটল বিপর্যয়ে ৬০৩টি বাড়ি খালি করেছে প্রশাসন। ফাটল দেখা দিয়েছে যোশীমঠের অন্যতম পুণ্যস্থান শঙ্করাচার্য মঠেও। ১৫ দিনের মধ্যেই তিলে তিলে ধ্বংস ছবির মতো সুন্দর মন্দিরনগরী।
advertisement
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর, যোশীমঠের সাম্প্রতিকতম বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথও। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলা যোশীমঠ-মালারি বর্ডার রোড এই এলাকার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে চিনা বর্ডারের। সীমান্তগামী সেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথের একাধিক জায়গায় দেখা দিয়েছে ধস। ফলে, এই সড়কপথের বহু জায়গাতেই বড় বড় ফাটল তৈরি হয়েছে। সেটাও চিন্তায় রেখেছে প্রশাসনকে।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গত শনিবার যোশীমঠ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি। তার পরে দেহরাদূনে তিনি আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকও করেন। রবিবার তাঁকে টেলিফোন করে যোশীমঠের পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন প্রধনমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। এদিন বিকেলে যোশীমঠ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব সহ উচ্চ পদস্থ আধিকারিকেরা। ছিল জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরও। যোশীমঠের স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরাও ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন এদিনের বৈঠকে। অন্যদিকে, এদিনই যোশীমঠে যান উত্তরাখণ্ডের প্রধান সচিব।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বৈঠক শেষে একগুচ্ছ আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। জানানো হয়, যোশীমঠের বর্মান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আপাতত, তিনি সাধারণ মানুষের সাহায্যে দ্রুত যে পদক্ষেপগুলি করা যায়, তার উপরে জোড় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, মূলত তিন ধাপে এই ধস-সমস্যার সমাধান করা হবে। আপাতত, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে শর্ট টার্ম কিছু পদক্ষেপ করবে প্রশাসন। তার মধ্যে থাকবে বিপর্যস্ত এলাকাগুলি থেকে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া, তাঁদের বসবাস ও অন্য চাহিদা পূরণ করা, যে সমস্ত এলাকায় ধস নামছে, তা রোধে যে পদক্ষেপ করা সম্ভব, কোনওরকম সময় নষ্ট না করে তা করে ফেলা।
এই কাজ যখন চলবে, তার মধ্যেই ধস রোধে মাঝারি এবং দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এই গোটা বিষয়ে প্রশাসনকে সাহায্য করবেন বিশেষজ্ঞেরা।
আরও পড়ুন: যোশীমঠ সঙ্কট চরমে! ধামিকে জরুরি ফোন Modi-র! জানতে চাইলেন বিস্তারিত হাল-হকিকৎ
কেন্দ্র ইতিমধ্যেই যোশীমঠে একটি NDRF দল ও ৪টি SDRF দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যে বাড়িগুলিতে ফাটল দেখা দিয়েছে, সেই সমস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের প্রধান সচিব প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে জানিয়েছে, আগামিকাল যোশীমঠ পরিদর্শন করবে সেক্রেটারি বর্ডার ম্যানেজমেন্ট এবং জাতীয় বিপর্যয় ম্যানেজমেন্ট অথরিটির প্রতিনিধি সদস্যেরা। এছাড়া, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, আইআইটি রুরকি, ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অফ হিমালয়ান জিওলজি-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞেরা যোশীমঠ এলাকার মাটি, মাটির স্তর, ভূ-প্রকৃতি ইত্যাদি পর্যালোচনা করে তাঁদের মতামত জানাবেন।