TRENDING:

আজও ঝাড়খণ্ডের ছোট্ট গ্রামে বিদ্যাসাগরকে আগলে রেখেছে বাঙালি সমাজ

Last Updated:

ঝাড়খণ্ডের কার্মাটারে ৫০০ টাকায় এক বাড়ি কিনে সেখানে চলে গিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। সালটা ছিল ১৮৭৩-৭৪।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
Venkateswar Lahiri
advertisement

কার্মাটার: জীবন এবং চারপাশের পৃথিবীটা যখন ভীষণভাবে তাঁর কাছে প্রতিকূল হয়ে উঠছিল তখন তিনি সকলের থেকে অনেক দূরে ঝাড়খণ্ডের কার্মাটারে ৫০০ টাকায় এক বাড়ি কিনে সেখানে চলে যান। সালটা ছিল ১৮৭৩-৭৪। সেই নির্জন সাঁওতালপল্লিতে দরিদ্র আদিবাসীদের সারল্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন । তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি তাঁদের ভীষণভাবে ভালবেসে ছিলেন।

advertisement

কার্মাটারে অসহায়, গরীব মানুষের সেবায় নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে মেথরপল্লিতে উপস্থিত থেকে তিনি নিজের হাতে কলেরা রোগীর শুশ্রুষা করেছেন। শীতে কার্মাটারে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা। সেই সময় মোটা চাদর কিনে গরীব মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছেন। সাঁওতালদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে ওষুধ দিতেন। পথ্যের জন্য বাতাসা, মিছরি দিতেন। সাঁওতালরা তাই তাঁকে দেবতার মতো শ্রদ্ধা করতেন। প্রতি বছর পুজোর সময় তাঁদের জন্য জামাকাপড় কিনতেন। কলকাতায় গেলে তাঁদের জন্য ফল নিয়ে আসতেন। সরল সাদাসিধে মানুষগুলিকে নিয়ে এভাবেই দিন কেটে যেত তাঁর। দুপুরে হোমিওপ্যাথির চেম্বার শেষ করে খাওয়া-দাওয়া সেরে বাগানের গাছপালা দেখাশুনা করা। পরে বই লেখায় মনোনিবেশ। বিকেলবেলা সাঁওতাল গ্রামে গিয়ে তাঁদের ঘরে ঘরে খবর নেওয়া, সাহায্য করা। এই ছিল বিদ্যাসাগরের শেষ জীবনের রোজনামচা।

advertisement

ভিনরাজ্যে বিদ্যাসাগরকে আগলে রেখেছিল বাঙালি সমাজ। বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি তৈরি করে ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রাম কার্মাটারে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ভিটে-মাটি, আমবাগান ও ব্যবহৃত জিনিষপত্র সংরক্ষিত করে রেখেছেন প্রবাসী বাঙালিরা। শুধু সংরক্ষণ নয় বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত স্কুল, লাইব্রেরি চালানোর পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের জন্য হোমিওপ্যাথির চেম্বার খুলে চিকিৎসা পরিষেবাও চালু রেখেছেন তাঁরা। জীবদ্দশায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ঠিক যেমনটা করতেন তাঁর সাধের নন্দনকাননে বসে ঠিক সেইভাবেই চলছে সমাজসেবা। সরকারি ও বেসরকারি স্তরে আমাদের সকলেরই দায়িত্ব এই মহান মনীষীকে যথাযথ সম্মান দেওয়া। বিহার বাংলা অ্যাকাডেমি ও ঝাড়খণ্ড বাংলা অ্যাকাডেমির সমন্বিত সংস্থা নন্দনকানন স্মৃতিরক্ষা সমিতির কথায়, জামতাড়া ও জসিডি স্টেশনের মাঝে কার্মাটার গ্রামের মালিয়া পাড়ায় বিদ্যাসাগরের বাড়িটির নাম নন্দনকানন। বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে এই ভিটে বাড়ি ও বাগানটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন কলকাতার সিংহদাস মল্লিক বলে কোনও একজনকে। ছোট্ট গ্রাম কার্মাটার সম্পর্কে কারোরই কিছু জানা ছিল না। ১৯৭২ সালে বিহার বাংলা অ্যাকাডেমির সদস্য তথা বিশিষ্ট আইনজীবী ধ্রুবজ্যোতি গুপ্ত অনেক অনুসন্ধানের পর বাড়িটি খুঁজে পান। এরপর কলকাতায় বিশিষ্টজনদের কাছে যাতায়াত করে তৎকালীন বিহার সরকারকে তদ্বির করে কিছু অনুদান জোগাড় করেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৪ সালের ২৯ মার্চ ২৪ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই বাড়িটি কিনতে সমর্থ্য হয় বিহার বাংলা অ্যাকাডেমি। বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা কমিটি গঠন হয়। গঠন হয় নন্দনকানন স্মৃতিরক্ষা কমিটিও। সবার যৌথ প্রয়াসে আর্থিক অনুদান যোগার করে ধীরে ধীরে বাড়িটি সংস্কার করা হয়। বিদ্যাসাগরের মূর্তি বসানো হয়। বালিকা বিদ্যালয় তৈরি করা হয়। একটি মিউজিয়াম তৈরি করা হয়। পরবর্তীকালে রেলকে প্রস্তাব দিয়ে কার্মাটার স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বিদ্যাসাগর রাখা হয়। সম্প্রতি আসানসোল রেলডিভিশন স্টেশনে একটি বিদ্যাসাগরের মূর্তি স্থাপন করেছে। ‘স্থানীয় জেলা প্রশাসন বিদ্যাসাগরের বাড়ি ও বাগানবাড়িটি সংস্কারের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। সেই টাকায় মিউজিয়ামের পাশাপাশি একটি ছোট্ট গেস্ট হাউসও তৈরি করা হয়েছে। বাইরে থেকে পর্যটকরা এলে বা গবেষণায় এলে যাতে থাকতে পারেন, এই ভাবনা থেকে।

advertisement

সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক সহায়তায় শুধু সংস্কার নয় ,ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রাম কার্মাটারে বিদ্যাসাগরের শিক্ষার প্রসার ও নারী শিক্ষা স্বাধীনতার প্রসারে সবাই আজ একজোট।

বাংলা খবর/ খবর/দেশ/
আজও ঝাড়খণ্ডের ছোট্ট গ্রামে বিদ্যাসাগরকে আগলে রেখেছে বাঙালি সমাজ
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল