এই বিপুল জয়ের হাত ধরেই জনতা দল (ইউনাইটেড) নেতা নীতিশ কুমার ফের একবার বসতে চলেছেন বিহারের মসনদে। বিহারে দীর্ঘতম সময় মুখ্যমন্ত্রী থাকা নীতীশ কুমার ইতিমধ্যেই নয়বার এই দায়িত্বভার পালন করছেন।
চলুন আজ এই প্রসঙ্গে একনজরে দেখে নেওয়া যাক ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকায় কারা কারা আছেন:
advertisement
পবন কুমার চামলিং (সিকিম): ২৪ বছর মুখ্যমন্ত্রী পদে (১২ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ – ২৬ মে, ২০১৯): পবন কুমার চামলিং ভারতীয় রাজনীতিতে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী। তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে সিকিমের নেতৃত্ব দিয়েছেন। চামলিংয়ের মেয়াদকালে, তার দল টানা পাঁচবার জয়লাভ করে যা তাঁকে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে একটি স্বতন্ত্র জায়গা এনে দিয়েছে।
নবীন পট্টনায়েক (ওড়িশা): ২৪ বছর (৫ মার্চ, ২০০০ – ১২ জুন, ২০২৪): নবীন পট্টনায়েক ২৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর দীর্ঘ মেয়াদে তিনি রাজ্যের রাজনীতি এবং প্রশাসনিক দৃশ্যপট আমূল বদলে দিয়েছিলেন। তাঁর শান্ত ব্যবহার, দৃঢ় প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জন্য তিনি বিশেষ ভাবে পরিচিত। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির জয়ের পর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তবে তিনি ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দীর্ঘস্থায়ী নেতাদের একজন হিসেবেই ইতিহাসের পাতায় থাকবেন।
জ্যোতি বসু (পশ্চিমবঙ্গ): ২৩ বছর (২১ জুন, ১৯৭৭ – ৫ নভেম্বর, ২০০০): জ্যোতি বসু ছিলেন ভারতের সবচেয়ে সম্মানিত বামপন্থী নেতাদের একজন। ২১ জুন ১৯৭৭ থেকে ৫ নভেম্বর ২০০০ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জ্যোতি বসু। ২৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি তাঁর মুখ্যমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদের জন্যও তাঁর নাম প্রস্তাবিত হয়েছিল, যে পদ তিনি অবশ্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
গেগং আপাং (অরুণাচল প্রদেশ): ২২ বছর (১৮ জানুয়ারি, ১৯৮০ – ১৯ জানুয়ারি, ১৯৯৯; ৩ অগাস্ট, ২০০৩ – ৯ এপ্রিল, ২০০৭): গেগং আপাং অরুণাচল প্রদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটের অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রায় ২৩ বছর ধরে দুটি পৃথক মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন – প্রথমটি ১৯৮০ থেকে ১৯৯৯ এবং দ্বিতীয়টি ২০০৩ থেকে ২০০৭। রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে আপাং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
লালথানহাওলা, (মিজোরাম): ২২ বছর (৫ মে, ১৯৮৪ – ২১ অগাস্ট, ১৯৮৬; ২৪ জানুয়ারি, ১৯৮৯ – ৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৮; ১১ ডিসেম্বর, ২০০৮ – ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮): লালথানহাওলা মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোট ২২ বছর ধরে তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন – ১৯৮৪–১৯৮৬, ১৯৮৯–১৯৯৮ এবং ২০০৮–২০১৮। তাঁর মেয়াদকালে, তিনি রাজ্যের সড়ক পরিকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছেন।
বীরভদ্র সিং (হিমাচল প্রদেশ): ২১ বছর (৮ এপ্রিল, ১৯৮৩ – ৫ মার্চ, ১৯৯০; ৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ – ২৪ মার্চ, ১৯৯৮; ৬ মার্চ, ২০০৩ – ৩০ ডিসেম্বর, ২০০৭; ২৫ ডিসেম্বর, ২০১২ – ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭): বীরভদ্র সিং হিমাচল প্রদেশের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। একাধিক মেয়াদে – ১৯৮৩–১৯৯০, ১৯৯৩–১৯৯৮, ২০০৩–২০০৭ এবং ২০১২–২০১৭ – তিনি প্রায় ২১ বছর ধরে রাজ্য শাসন করেছিলেন। সিং একজন অভিজ্ঞ, অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন যিনি পার্বত্য রাজ্যগুলির চাহিদা অনুসারে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন মডেল তৈরি করেছিলেন। তাঁর কার্যকাল হিমাচল প্রদেশের ইতিহাসে “স্বর্ণযুগ” হিসাবে বিবেচিত হয়।
মানিক সরকার (ত্রিপুরা): ১৯ বছর (১১ মার্চ, ১৯৯৮ – ৯ মার্চ, ২০১৮): মানিক সরকারকে ভারতের সবচেয়ে বিনয়ী এবং সৎ মুখ্যমন্ত্রীদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ১১ মার্চ ১৯৯৮ থেকে ৯ মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত টানা ১৯ বছর ত্রিপুরার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার সমাজতান্ত্রিক আদর্শ এবং কঠোর শৃঙ্খলার জন্য পরিচিত মানিক সরকার পরিচ্ছন্ন এবং নিরপেক্ষ নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠেন।
নীতীশ কুমার (বিহার): ১৯ বছর (৩ মার্চ – ১১ মে, ২০০০; ২৪ নভেম্বর, ২০০৫ – ২০ মে, ২০১৪; ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ – বর্তমান): নীতীশ কুমার বিহারের রাজনীতিতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা। ২০০০ সালে মাত্র সাত দিনের জন্য প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ কুমার কিন্তু ২০০৫ সালের পর তাঁর রাজনৈতিক মর্যাদা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। ২০১৫ সাল থেকে টানা মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন তিনি আর এবার তাঁর দশম মেয়াদের আর কিছুদিনের অপেক্ষা। নীতীশ কুমার ১৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিহার শাসন করেছেন, যা তাঁকে রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী নেতাদের একজন করে তুলেছে।
এম করুণানিধি (তামিলনাড়ু): ১৮ বছর (১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ – ৩১ জানুয়ারি, ১৯৭৬; ২৭ জানুয়ারি, ১৯৮৯ – ৩০ জানুয়ারি, ১৯৯১; ১৩ মে, ১৯৯৬ – ১৪ মে, ২০০১; ১৩ মে, ২০০৬ – ১৬ মে, ২০১১): করুণানিধি, যিনি “কলাইগনার” নামে পরিচিত, তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। একাধিক আলাদা আলাদা মেয়াদে – ১৯৬৯–১৯৭৬, ১৯৮৯–১৯৯১, ১৯৯৬–২০০১ এবং ২০০৬–২০১১ – তিনি মোট ১৮ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার পালন করেন।
প্রকাশ সিং বাদল (পঞ্জাব): ১৮ বছর (২৭ মার্চ, ১৯৭০ – ১৪ জুন, ১৯৭১; ২০ জুন, ১৯৭৭ – ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০; ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭ – ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০২; ১ মার্চ, ২০০৭ – ১৬ মার্চ, ২০১৭): প্রকাশ সিং বাদল পঞ্জাবের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে অন্যতম বিখ্যাত নেতাদের মধ্যে একজন ছিলেন। ১৯৭০–১৯৭১, ১৯৭৭–১৯৮০, ১৯৯৭–২০০২ এবং ২০০৭–২০১৭ – এই তিন মেয়াদে তিনি মোট ১৮ বছর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার পালন করেন। তিনি একসময় ভারতের সর্বকনিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন। বাদলের মেয়াদ পঞ্জাবের কৃষি, গ্রামীণ পরিকাঠামো এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থায় নতুন দিক খুলে দেওয়ার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
