মূলস্রোতের রাজনীতির সঙ্গে ডা. মনমোহন সিং যাত্রাপথের শুরুটা খুব একটা সহজ ছিল না। রাজনীতির মানুষ নাহলেও দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই ভারতের অর্থনীতির উন্নতিতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন তিনি। ১৬ সেপটেম্বর, ১৯৮২ থেকে ১৪ জানুয়ারি ১৯৮৫ পর্যন্ত আরবিআই-এর গভর্নর পদে নিযুক্ত ছিলেন। মৃতভাষী এই অর্থনীতিবিদ ১৯৯১ সালে রাজ্যসভার সংসদ হিসেবে জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। একই বছর, ২১শে জুন ডা. সিং অর্থমন্ত্রীর পদে অভিষিক্ত হন। তিনি অর্থমন্ত্রকের দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করে।
advertisement
ভারপ্রাপ্তির পরেই তিনি আন্তর্জাতিক বাজারে ফাটকাবাজী আটকাতে টাকার অবমূল্যায়ণ করেন। এইসময় বিশ্ব রাজনীতির অস্থিতিশীল অবস্থা থেকে জাতীয় অর্থনীতিকে বাঁচাতে ২৪ জুলাই ডা.মনমোহন সিং পেশ করলেন ভারতের নয়া শিল্পনীতি। এই নীতির মাধ্যমে একদিকে দাড়ি টানা হল ‘লাইসেন্সরাজে’, অন্যদিকে জোর দেওয়া হল বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগে। সমগ্র পৃথিবীটাই পরিণত হল ‘গ্লোবাল ভিলেজে’।
খুবই অল্প সময়ে হাতেনাতে মিলল ফলাফল। সাফল্য পেল ‘জেন্টালম্যান’-এর শিল্পনীতি। ভারতের অর্থনীতি দেখল নব সূর্য্যদোয়। আশির দশকের শেষ থেকে জিডিপির হার ছিল নিম্নমুখী। ১৯৯১ জিডিপি হার তলানিতে এসে পৌঁছায়। ১৯৯২ সালের নয়াউদারবাদী সংস্কারের ফলে ভারতে জাতীয় উৎপাদনের হার(GDP) বাড়তে শুরু করে। পরবর্তী পাঁচ বছর জিডিপি গড়ে ৬.৫ শতাংশ হারে বাড়তে শুরু করে। ১৯৯৮-২০০৪ রাজ্যসভায় বিরোধী নেতার দায়িত্ব পালন করে। তিনি ২০০৪-২০১৪ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশসেবা করেন। একাধিক জনকল্যাণকর নীতি যেমন, ১০০ দিনের কাজ, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন, ইন্দিরা আবাস যোজনা ইত্যাদি তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার গ্রহণ করেন। তবে, এই সময় তদকালীন সরকার একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ জর্জরিত ছিল। ২০১৪ সালে দ্বিতীয় ইপিএ সরকারের পতনের পিছনে দুর্নীতি ছিল প্রধান কারন।
সরাকারের বিরুদ্ধে একাধিক সমালোচনা থাকলেও, ডা. সিং-এর সততা ছিল প্রশ্নাতীত। ভারতীয় রাজনীতি যখন সৌজন্য হারাতে বসেছে, সেইসময় এই ‘জন্টালম্যানের’ ভদ্রতা শুধু নিদর্শন নয়, যবু রাজনীতিবিদদের কাছে অনুপ্ররণাদায়কও। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ফার্স্ট ক্লাস এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে অক্সফোর্ড থেকে ডিফিল অর্জন করা, পৃথিবী বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ডা. মনমোহন সিং শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ চাকরির সুযোগ ছেড়ে, ভারতীয় অর্থনীতির সংস্কারের অন্যতম কাণ্ডারী দায়িত্ব পালন করেন।