শ্রমমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই সংস্কার কর্মজগতের জন্য “রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ”, যা আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যের দিকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
নতুন চারটি বিধি হল— কোড অন ওয়েজেস (২০১৯), ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোড (২০২০), কোড অন সোশ্যাল সিকিউরিটি (২০২০) এবং অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশনস কোড (২০২০)।
এই চারটি বিধি একসঙ্গে মজুরি, কর্মপরিবেশ, নিয়োগ, সামাজিক সুরক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা–সংক্রান্ত নিয়মগুলির বড় পরিবর্তন আনে, যার মধ্যে নারী শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষাকে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে।
advertisement
টাকা বাড়বে! Gen z-রা অভ্যাস গড়ে তুলুন শুরু থেকেই, ৮টি জরুরি আর্থিক পরামর্শ মেনে চললেই ধনী হবেন
নারীদের জন্য সুযোগ কীভাবে বাড়ছে?
নতুন বিধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হল— সব ক্ষেত্রে নারীদের নাইট শিফটে কাজ করার অনুমতি। আগে ভারী যন্ত্রপাতির কাজ বা ভূগর্ভস্থ খনির মতো ক্ষেত্রে নারীদের রাতের শিফটে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এখন সেই সীমাবদ্ধতা উঠে যাচ্ছে।
তবে শর্ত হিসাবে রাখা হয়েছে—
- নারীর লিখিত সম্মতি,
- নিরাপদ কর্মপরিবেশ,
- নিরাপদ যাতায়াত,
- সিসিটিভি নজরদারি ও নিরাপত্তাকর্মী।
রপ্তানি–ভিত্তিক শিল্পে রাতের শিফটে কাজের সুযোগ নারীদের আয় বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সমান মজুরি, বৈষম্যবিরোধী নিয়ম ও প্রতিনিধিত্ব
নতুন বিধিতে সমান কাজে সমান মজুরি আইনি বাধ্যবাধকতা। পূর্বের অস্পষ্টতা দূর হয়ে গেল।
এখন থেকে কোনও প্রতিষ্ঠান ইচ্ছেমতো নারীদের কম মজুরি দিতে পারবে না।
আইনে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে—
- নিয়োগে বৈষম্য,
- মজুরি–বৈষম্য,
- কাজের দায়িত্ব বণ্টনে বৈষম্য,
- পদোন্নতিতে বৈষম্য।
গ্রিভিয়েন্স রেড্রেসাল কমিটিতে নারীদের বাধ্যতামূলক সদস্যপদও নির্ধারিত হয়েছে, যাতে কর্মস্থলের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে নারীদের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়।
পরিবারের সংজ্ঞা বিস্তৃত, সামাজিক সুরক্ষায় নারীদের লাভ
সামাজিক সুরক্ষা বিধিতে নারীদের জন্য বড় পরিবর্তন হল— “পরিবার”–এর আওতায় শ্বশুর–শাশুড়িকেও অন্তর্ভুক্ত করা।
অনেক নারীর ওপর থাকা পরিচর্যার দায়িত্বকে স্বীকৃতি দেয় এই সংযোজন।
নতুন বিধিতে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় এসেছে—
- গিগ কর্মী,
- প্ল্যাটফর্ম কর্মী,
- অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী।
এই শ্রেণিগুলিতে নারীর অনুপাত বেশি হওয়ায় নতুন বিধি তাদের আর্থিক নিরাপত্তা বাড়াবে।
প্রত্যেক কর্মীকে নিয়োগপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক— যা চাকরির শর্ত পরিষ্কারভাবে জানাবে এবং চাকরির প্রমাণ হিসেবে সুরক্ষা দেবে।
নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ–সংক্রান্ত নিয়ম
ওএসএইচডব্লিউসি (OSHWC) কোডে যে সুরক্ষা–ব্যবস্থা আনা হয়েছে, তা নারীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ—
- ৪০ বছরের ওপর কর্মীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষা
- নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা
- অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি
- বেতন–সহ ছুটি
- ৫০০–র বেশি কর্মী থাকলে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা কমিটি
- বিপজ্জনক শিল্পক্ষেত্রে নিরাপত্তা মান নির্ধারণের জন্য জাতীয় ওএসএইচ বোর্ড
কেন আনা হল নতুন শ্রমবিধি?
শ্রম মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, পুরনো আইনগুলি ছিল অতীতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে। নতুন বিধি—
- শ্রমিকদের সুরক্ষা বাড়ানো
- সামাজিক সুরক্ষায় সহজ প্রবেশ
- গিগ, প্ল্যাটফর্ম ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের কোটি শ্রমিককে আইনি সুরক্ষায় আনা
- কর্মসংস্থানকে বেশি সংগঠিত ও স্বচ্ছ করা— এই লক্ষ্যেই তৈরি।
নতুন শ্রমবিধিতে প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলির সংক্ষিপ্ত চিত্র
- সব শ্রমিকের জন্য সময়মতো ন্যূনতম মজুরি
- প্রত্যেক কর্মীকে বাধ্যতামূলক নিয়োগপত্র
- নারীদের সমান মজুরি ও নিরাপদ নাইট–শিফট
- প্রায় ৪০ কোটি শ্রমিককে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা
- গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের পিএফ, ইএসআইসি, বিমা
- স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ক্ষেত্রে এক বছরের পর থেকেই গ্র্যাচুইটির সুযোগ
- ৪০ বছরের ওপর কর্মীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষা
- অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি
- বিপজ্জনক ক্ষেত্রে ১০০% স্বাস্থ্যসুরক্ষা
- ৫০০–র বেশি কর্মীযুক্ত প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা কমিটি
