মঙ্গলবার সকালটা আর সমস্ত সকালের মতোই তো ছিল। সকাল সকাল অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে স্কুটিতে বসিয়ে বেরিয়েছিলেন লোহিত। বাচ্চাগুলোকে ডে কেয়ার সেন্টারে দিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজে জায়গায় চলে যেতেন। কে জানত, আউটার রিং রোডের কাছে তাঁদের জন্য এই ফাঁড়া অপেক্ষা করছে।
ট্র্যাফিক জ্যাম থাকার কারণে স্কুটি দাঁড়িয়ে পড়েছিল মেট্রো প্রকল্পের নির্মীয়মাণ এক বিশাল পিলারের ঠিক নীচটাতে। সদ্য তৈরি সেই পিলারকে ঠেকান দিয়ে রেখেছিল একটি স্টিলের রড। হঠাৎই হড়কে যায় সেই রড, আর কয়েক টন ভারী কংক্রিটের সেই পিলার হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে লোহিতদের স্কুটারের উপর। পিলারের নীচে চাপা পড়ে যায় লোহিতের স্ত্রী তেজস্বীনি, ছেলে বিহান। লোহিত এবং তাঁর আরও এক সন্তানও ঘটনায় গুরুতর আহত হয়। তড়িঘড়ি তাঁদের উদ্ধার করে যখন নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, ততক্ষণে সব শেষ। মৃত্যুর অতল খাদে তলিয়ে গিয়েছেন তেজস্বীনি। নিঃস্পন্দ বিহানও।
advertisement
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় লোহিত বলেন, "আমার তো সব চলে গেল। কী ভাবে এরা কাজ করে। মানুষের নিরাপত্তা তো সবার আগে দেখা উচিত।"
অন্যদিকে, লোহিতের বাবা বিজয় কুমার জানিয়েছেন, যতক্ষণ না মেট্রোর ওই কনট্রাক্টরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, ততক্ষণ তাঁরা তেজস্বিনী এবং বিহানের দেহ নেবেন না। সাধারণ মানুষের প্রাণ ঝুঁকিতে ফেলে কী ভাবে উন্নয়নের কাজ চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিজয়।
মেট্রো বিপর্যয়ের ঘটনায় ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই। লোহিতের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য করার ঘোষণা করেছেন তিনি।
অন্যদিকে, বেঙ্গালুরু মেট্রো রেল কর্পোরেশনও ঘটনায় অন্তর্বর্তী তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। BMRCL-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানিয়েছেন, "যে কোনও নির্মাণকাজের সময় আমরা যথোপযুক্ত সুরক্ষার বন্দোবস্ত করি। বিষয়টি কোনও প্রযুক্তিগত কারণে ঘটেছে, নাকি কোনও মানুষের ভুলে তা জানতে আমরা তদন্ত করছি। ভবিষ্যতে যাতে এইরকম ঘটনা আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে যা ব্যবস্থা করার আমরা তা করব।"