দিল্লির নির্ভয়ার স্মৃতি ফিরে আসে হায়দরাবাদে। পশু চিকিৎসক তরুণীকে অপহরণ থেকে খুন করা পর্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে গেছে চার অভিযুক্ত। ২৭ নভেম্বর অপহরণ ধর্ষণ ও পুড়িয়ে খুনের ঘটনার পরই তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ ও পারিপার্শ্বিক প্রমাণের ভিত্তিতে সাইরাবাদ পুলিশ গ্রেফতার করে চার অভিযুক্ত মহম্মদ আরিফ, জে নবীন, জে শিবা ও চেন্নাকেশাভুলুকে ৷ জেরায় অপরাধের কথা স্বীকার করে চারজনই ৷ তারপরই তদন্তকারীরা সন্দেহ নিরসনে কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানায় জাতীয় সড়কের মহিলাদের ধর্ষণ ও পুড়িয়ে খুন করার আরও ১৫টি মামলার নিয়েও জেরা শুরু করে অভিযুক্তদের ৷ তাতেই সামনে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷
advertisement
মঙ্গলবার এই তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, এত নিখুঁত অপরাধের ছক দেখে সন্দেহ হওয়াতেই জেরা শুরু করা হয় ৷ পুলিশি জেরার মুখে পড়ে আরিফ ও চেন্নাকেশাভুলু জানায়, এর আগেও একইভাবে আরও নয় মহিলাকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে খুন করেছে তারা ৷ তেলেঙ্গনার মাহবুবনগর, সঙ্গারেড্ডি, রঙ্গারেড্ডি সহ কর্ণাটকের বেশ কিছু শহরে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তারা ৷ শুধু তাই কর্ণাটক ও তেলেঙ্গনা এলাকায় একাধিকবার যৌনকর্মী সহ বিভিন্ন মহিলাদের শ্লীলতাহানি, যৌন হেনস্থার মতোও ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা ৷ অপরাধীদের এই স্বীকারোক্তির পরই উল্লেখিত জায়গাগুলোর পুরনো অপরাধের মামলাগুলিও খতিয়ে দেখতে শুরু করে তদন্তকারীরা ৷
পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৭ নভেম্বর, সন্ধে ছটায় গছিবোলি টোল প্লাজার কাছে লরিতে ছিল ৪ অভিযুক্ত ৷ লরিতেই মদ খাচ্ছিল মহম্মদ আরিফ, জল্লু শিবা, জল্লু নবীন কুমার, চিন্তাকুন্তা চেনেকেশ্বাভুলু ৷ সন্ধে ৬টায় লরির বাঁ দিকে স্কুটারটি রাখেন চিকিৎসক তরুণী৷গছিবোলি টোল প্লাজার কাছ থেকে ক্যাবে করে চলে যান তিনি ৷ মদ্যপ অবস্থায় তরুণীকে দেখেই আরিফ, নবীনরা ধর্ষণে পরিকল্পনা করে। তরুণী চলে যেতেই, তাঁর স্কুটারের টায়ার পাংচার করে দেয় নবীন। রাত সাড়ে ৯টায় শামসাবাদ থেকে ফিরে আসেন তরুণী, দেখেন স্কুটারের চাকায় হাওয়া নেই ৷ সাহায্য করতে তরুণীর কাছে এগিয়ে যায় আরিফ ও চেন্নাকেশাভুলু ৷
তরুণীর বিশ্বাস অর্জন করতে জল্লু শিবাকে স্কুটারে হাওয়া দেওয়ার জন্য পাঠায় আরিফ। এরমধ্যে বোনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তরুণী। কিছুক্ষণ পর স্কুটার নিয়ে ফিরে আসে জল্লু শিবা। এরপরই অপরাধের শুরু, তরুণীর হাত চেপে ধরে মহম্মদ আরিফ, পা ধরে চিন্তাকুন্তা চেন্নাকেশাভুলু ৷ কোমর চেপে ধরে নবীন ৷ তরুণীকে লরির পাশে অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যায় তারা ৷ তরুণীর মোবাইল সুইচ অফ করে দেয় নবীন ৷ তখনও সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলেন তরুণী ৷ চিৎকার থামাতে নির্যাতিতার মুখে মদ ঢেলে দেয় নবীন ও চিন্তাকুন্তা
বিবস্ত্র করে একের পর এক ধর্ষণ করে চিন্তাকুন্তা, আরিফ, জল্লু নবীন ও জল্লু শিবা। অত্যাচারে অচৈতন্য, রক্ষক্ষরণ হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর তরুণীর জ্ঞান ফিরতেই খুনের সিদ্ধান্ত নেয় অভিযুক্তরা। নাক-মুখ চেপে তরুণীকে খুন করে মহম্মদ আরিফ। তরুণীর মোবাইল, পাওয়ার ব্যাঙ্ক ও ঘড়ি নিয়ে নেয় নবীন। প্রমাণ লোপাট করতে দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
এরপরই চাদরে মুড়ে দেহ লরিতে তোলে ৪ জন ৷ রাত ১১টায় শাসমাবাদের দিকে রওনা হয় লরি ৷ আশিয়ানা হোটেলের কাছে ব্রিজ দেখে লরি দাঁড়ায় ৷ ব্রিজের তলায় দেহ পোড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় অভিযুক্তরা ৷ সেখানেই দেহ ফেলে পেট্রোল-ডিজেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা ৷ পুড়িয়ে ফেলা হয় তরুণীর মোবাইলের সিম কার্ডও ৷
রাত থেকে ভোর রাত। একের পর এক অপরাধেও হাত কাঁপেনি অপরাধীদের। সব শেষে অটোনগরে লরি রেখে যে যার বাড়ি ফিরে গেছে। আপাতত জেল হেফাজতে চার অভিযুক্ত। বিচার চাইছে গোটা দেশ। ৬ ডিসেম্বরে কাকভোরে ঘটনার পুর্ননির্মাণের সময় পুলিশি এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় চার অভিযুক্তের ৷
