#হায়দরাবাদ: বীরপুজো শেষ হবে সময়ের নিয়মে। ঈশ্বরতুল্য মনে করে কার্যত যাঁদের পুজো করা হচ্ছিল, তাঁদেরও এবার হাঁটতে হবে রুক্ষ বাস্তবের রাস্তায়। হ্যাঁ, সাইবারাবাদ পুলিশের কথাই বলছি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে, এবার তাঁদের নিজেদের জন্য, নিজেদের হয়ে লড়াইতে নামতে হবে। সেই লড়াইয়ে পাশে থাকবে না, আজ যাঁরা পুষ্পবৃষ্টি করছেন। ইতিমধ্যে আদালতে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আদতে এবার ওই মহানায়ক হয়ে ওঠা মানুষগুলোকে এক আরও বড় লড়াই লড়তে হবে।
advertisement
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে, এই এনকাউন্টারে সঙ্গে সঙ্গে মামলা হবে। এবার কিন্তু অভিযুক্তদের তালিকায় নাম থাকবে তাঁদের। শুরু হবে স্বাধীন কোনো সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত। প্রথমেই, যাঁরা গুলি চালিয়েছেন, সেই আগ্নেয়াস্ত্র জমা করতে হবে। সেগুলির ব্যালেস্টিক পরীক্ষা হবে। অন্যদিকে যে বা যারা ছিল, তারা গুলি চালালে সেই আগ্নেয়াস্ত্রগুলিরও ব্যালেস্টিক পরীক্ষা হবে। শুধু তাই নয়,দু'পক্ষের সবার হাতে (যারা গুলি চালিয়েছে)গান পাউডার লেগে আছে কিনা তারও ফরেনসিক পরীক্ষা হবে। নিহতদের রঙিন ছবি তুলে পরিবারের লোকেদের দিয়ে শনাক্তকরণ করাতে হবে।
রক্ত লাগা জামা-কাপড়, মাটি, চুল বা অন্য কোনো নমুনা থাকলে তাও ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠাতে হবে। ঘটনাস্থলে কোনো সাক্ষী থাকলে তাঁর এবং অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বয়ান রেকর্ড করতে হবে। কী কারণে, কোন পরিস্থিতিতে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে তার যুক্তিপূর্ণ ব্যখ্যা ও ঘটনাস্থল বোঝাতে স্কেচ দিতে হবে।
জেলা হাসপাতালে, দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ময়নাতদন্ত করবেন। তার মধ্যে একজন বিভাগীয় প্রধান হলে ভাল। পুরো ময়নাতদন্তের ভিডিও করতে হবে। জাতীয় বা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে দ্রুত রিপোর্ট পাঠাতে হবে। সাইবারাবাদের ঘটনায় এখানেই শেষ নয়। জননায়ক পুলিশকর্মীদের এটাও প্রমাণ করতে হবে যে, ওই চারজন সত্যিই মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করেছিলেন। তার জন্য আরেক দফা প্রমানপত্র। যেহেতু ওই চিকিৎসক নিহত। স্বাভাবিকভাবে তাঁর বয়ান নেই। এমন ঘটনায় অভিযুক্তদের দোষ প্রমাণে যা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, তা হল প্রযুক্তি ও পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ । সিসিটিভি ফুটেজ, জামাকাপড়ে লেগে থাকা বীর্য, অভিযুক্তদের শরীরে কোনো আঘাত, চুল এবং আরো কিছু নমুনা প্রয়োজন। এই চার অভিযুক্তদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ইতিমধ্যে নমুনা পাঠানো হয়েছে বলে জেনেছি। এতকিছুর পরেও এবার অভিযুক্ত হিসাবে তদন্ত কমিশন আর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সবাইকে সব প্রশ্নে এক উত্তর দিয়ে প্রশ্নকর্তাকে সন্তুষ্ট করতে হবে। সামান্য ভুলে যা এনকাউন্টারের থেকেও ভয়ঙ্কর।
আরও একটা কথা, যতদিন না যাবতীয় তদন্ত শেষে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, এই ঘটনা ফেক এনকাউন্টার নয়, ততদিন জনতার আদালতে বীরপুজো পাওয়া এই পুলিশকর্মীদের আউট অফ টার্ন প্রমোশন বা পুরস্কার দেওয়া যাবে না। যদিও এরপরেও অনেকেই বলবেন রাষ্ট্রশক্তি সব পারে। সবই তো পুলিশের হাতেই। কিন্তু ভুলচুক হতেই পারে। সবাই সমর্থন নাও করতে পারেন। এই তদন্তের সময়টা কোন মানসিকতায় কাটাতে হবে তাঁদের বুঝতে পারছেন? আর আমি, আপনি ফুল ছড়িয়ে, বাহবা দিয়ে, বীর হিসাবে যাঁদের পুজো করছি তাঁরা সেইসময়টা একেবারে একা এক অভিযুক্ত।
