পুলিশ তদন্তে জানা গিয়েছে যে গৌরব এতটাই বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন যে সকলেই তাঁকে আইএএস অফিসার বলে ধরে নিতেন। তাঁর দামি ব্র্যান্ডেড পোশাক, আইফোন, দুটি বিলাসবহুল গাড়ি, ব্যক্তিগত রক্ষী ছিল এবং লোকেদের সঙ্গে দেখা করার সময়ে তিনি বিলাসবহুল পাঁচতারা হোটেলে থাকতেন। প্রাথমিক তদন্তে এও জানা গিয়েছে যে লখনউতে ৫০ লক্ষ টাকার একটি ফ্ল্যাট, বিহারে দুটি সম্পত্তি এবং লখনউ, গোরখপুর এবং বিহারে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তাঁর রয়েছে।
advertisement
প্রতারণার শিকার বিহারের ঠিকাদার মাধব মুকুন্দ এই ভুয়ো আইএএস অফিসার ললিত কিশোরের আড়ম্বরপূর্ণ জীবনধারা এবং অশ্লীলতার কথা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘যোগাযোগের পর শহরের একটি হোটেলে এই ভুয়ো আইএএস অফিসার গৌরব সিংয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি আমাকে তাঁর পাশের চেয়ারে বসতে বললেন। ফোনে কথা বলার সময় তিনি বলছিলেন, আমি মুজাফফরপুরের একটি অভিযান থেকে ফিরছি। আমি ইতিমধ্যেই সেখানকার সমস্ত অফিসারকে বরখাস্ত করেছি। আগামীকাল এটি সংবাদ শিরোনামে থাকবে।’’
ঠিকাদার বললেন, ‘‘আমি খুবই মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমাদের কথোপকথনের সময় জানতে পারলাম তিনি একজন আইএএস অফিসার। আমিও যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছিলাম। তাঁর আড়ম্বরপূর্ণ জীবনধারা দেখে আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম যে তিনি অবশ্যই একজন খুব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। পরে আমাদের যোগাযোগ আরও বাড়ানোর জন্য আমরা ফোনে দুই বা তিনবার কথা বলেছিলাম। গৌরব তখন বললেন, আমার সাথে দেখা করতে এসো। আমি তোমাকে একটি বড় প্রকল্পের কথা বলব, কিন্তু আমি এখন ব্যস্ত। ১৫ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে আমি আবার পটনায় গৌরবের সাথে দেখা করি। গৌরব সেদিন আমার সঙ্গে খুব আন্তরিকভাবে কথা বলেছিলেন। তিনি অনেকক্ষণ ধরে বসে আমার কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম যে আমি সরকারি বিভাগের জন্য টেন্ডার নিই এবং নির্মাণ কাজ করি। তার পর তিনি বললেন, তুমি এত ছোট কাজ কেন করছ? এসো, আমি তোমাকে ৫০০ কোটি টাকার একটি বড় কেন্দ্রীয় কনট্র্যাক্ট করিয়ে দিই। আমি রাজি হয়ে যাই। আমি তাঁর কথামতো সব কিছু করি।’’
মাধব মুকুন্দ জানান, ‘‘গৌরব আমাকে গুলরিহায় তাঁর বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলেন। আমি বেশ কয়েকবার তাঁর সঙ্গে দেখা করেছি। গৌরব আমাকে ৪৫০ কোটি টাকার একটি কনট্র্যাক্ট পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এমনকি তিনি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এই বিষয়ের একটি কাগজও পাঠিয়েছিলেন। তিনি আমাকে একটি সংবাদপত্রের ক্লিপিংও পাঠিয়েছিলেন, যাতে ৪৫০ কোটি টাকার টেন্ডারের নোটিসও ছিল। আমি কাজ পাওয়ার জন্য তাঁর পিছনে ছুটতে থাকি। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে গৌরব আমাকে ৫ কোটি টাকারও বেশি খরচ করতে বাধ্য করেন। আমি তাঁকে বিলাসবহুল গাড়িও দিয়েছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর অপকর্ম প্রকাশ পেতে শুরু করে। আমি এটাও বুঝতে পারি যে তিনি একজন প্রতারক, মানুষকে প্রতারণা করে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন।’’
এই অকপট স্বীকারোক্তি ছাড়া মাধব মুকুন্দর বিবৃতিতে এটাও প্রকাশ পেয়েছে যে এই ভুয়ো আইএএস ললিত কিশোরের তিনজন বান্ধবী আছে। ঠিকাদার মাধব বলছেন, শহরের একটি হোটেলে ভুয়ো আইএএস ললিত কিশোরের সঙ্গে দেখা করার সময় প্রায় ২০ বছরের এক সুন্দরী তরুণী গভীর রাতে এসেছিলেন। “হোটেলের সবাই তাঁর দিকে তাকাতে শুরু করেন। গৌরব বলেন যে ওই তরুণী তাঁর বোনের মেয়ে। এই বলে তিনি তরুণীকে নিজের ঘরে নিয়ে চলে যান। সারা রাত তাঁরা ঘর থেকে বের হননি। সকালে তাঁর সঙ্গে থাকা একজন দেহরক্ষী তরুণীকে বউদি বলে নিজেদের মধ্যে রসিকতা করে। ওই দেহরক্ষী জিজ্ঞাসা করে যে বউদি এখনও আছে না কি চলে গিয়েছে, এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই সবাই হাসতে শুরু করে। তখন আমার সন্দেহ হল, আমি ভেবেছিলাম তিনি একজন বড় অফিসার, এটা তাঁর জন্য একটা সাধারণ ব্যাপার।”
মাধব দাবি করেছেন যে তিনি ভুয়ো আইএএস অফিসারকে বিলাসবহুল গাড়ি, ড্রাইভার এবং ব্যক্তিগত দেহরক্ষী সরবরাহ করেছিলেন। তবে, গৌরবের জালিয়াতি প্রকাশ পেতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে মাধব মুকুন্দ বিলাসবহুল গাড়িগুলি ফিরিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। বর্তমানে এই ভুয়ো আইএএস অফিসার ললিত কিশোর ওরফে গৌরব সিং কারাগারে আছেন।
